সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২২:০৭

বৃহৎ অস্ত্র বাজারে পরিণত হচ্ছে এশিয়া

এখন তুঙ্গে এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা। ভারত অস্ত্র আমদানিতে সবচেয়ে এগিয়ে। এমনকি জাপানের মতো দেশও নতুন করে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুদ্ধাস্ত্র আমদানিতে বিপুল বাজেট বরাদ্দ করেছে তারা। অপরদিকে সামরিক বাজেট কমিয়েছে পেন্টাগন। ফলে ব্যাপক রাজস্ব ঘাটতিতে পড়েছে মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। নতুন বাজার খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

এশিয়ার দেশগুলোর বর্তমান মনোভাবকে কাজে লাগানোর জন্য উন্মুখ হয়ে আছে এসব মার্কিন প্রতিষ্ঠান। মার্কিন অস্ত্রের সবচেয়ে বড় বাজারে পরিণত হতে যাচ্ছে এশিয়া। ইতিমধ্যে একাধিক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ভারতের মতো দেশগুলোকে লোভনীয় প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফোর্ট ওর্থের একটি কারখানায় ১৯৭০ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশের পর থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মার্কিন সামরিক শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এফ-১৬ এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন। এরা এখন বড় কোনো বিদেশি ক্রেতা ধরতে উঠেপড়ে লেগেছে।

এদিকে সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৫ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ রেখেছেন। এই ঘোষণার পর লকহিড ভারতে যুদ্ধবিমান রপ্তানির জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এটা চুক্তি করতে পারলেই এফ-১৬ পাঠানো শুরু করবে লকহিড। লকহিড ভারতের মাটিতেই এফ-১৬ উৎপাদনের পরিকল্পনাও করছে। কোম্পানিটির অ্যারোনেটিকস বিজনেস ডেভেলপমেন্ট পরিচালক রান্দাল হাওয়ার্ড বলেন, ‘ভারতকে সরবরাহ কেন্দ্রে পরিণত করতে আমরা যা করা দরকার সবই করবো।’

তবে প্রতিদ্বন্দ্বী বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং ও সাব ভারতকে একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে। ফলে লকহিডকে ভারতের বাজার ধরতে হলে বেশ প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। তবে যাইহোক, এ ধরনের প্রস্তাব প্রমাণ করে যে, মার্কিন অস্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী তার অস্ত্রের গ্রাহক তৈরিতে খুবই তৎপর।

২০১৩ সালে পেন্টাগন বাজেট সংকুচিত করে। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা প্রতিষ্ঠানটি নতুন বাজারের সন্ধান করছে।  মার্কিন কোম্পানিগুলোর এই তৎপরতার ফলে বিদেশি ক্রেতা যে বাড়ছে তার প্রমাণ গত বছরের পরিসংখ্যানেই পাওয়া যাচ্ছে। ব্লুমবার্গের অনুসন্ধান অনুযায়ী, গত বছর পাচঁটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের বিক্রিত অস্ত্রের ২৪ শতাংশের ক্রেতাই বিদেশি। পত্রিকাটির অনুসন্ধানে আরো উঠে এসেছে, ২০০৯ সালে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রিত অস্ত্রের ১৬ শতাংশই কিনেছে বিদেশি ক্রেতারা। সেখানে গত বছর তা লাফিয়ে ১০ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব দুই দশমিক চার শতাংশ কমেছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেথিয়ন দাবি করছে, ২০১৬ সালে মার্কিন অস্ত্র বিক্রির ৩৫ শতাংশ রাজস্বই আসবে আন্তর্জাতিক বিক্রি থেকে। যেখানে গত বছর ছিল ৩১ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা টবি ও’ব্রেইন বলেন, ‘আমাদের বৈশ্বিক দেনা আদায়ের বিষয়ে কৌশল কার্যকর আছে। পাশাপাশি অস্ত্র ক্রয়ের আগাম বুকিংও বেশ ভালো।’

এশিয়ার দেশগুলো যুদ্ধবিমান কিনছে,বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে জাপান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে উৎসাহিত হচ্ছে। আর ভারতের সঙ্গে চীন ও পাকিস্তানের সীমান্ত থাকায় দেশটি দক্ষিণ এশিয়ায় বেইজিংয়ের প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়েও সতর্ক।

এ অঞ্চলের দেশগুলোর প্রায় সবাই  উত্তর কোরিয়ার বেপরোয়া আচরণের বিষয়েও উদ্বিগ্ন। যেখানে চলতি বছরের ২৪ আগস্ট দেশটি ৩০০ মাইল পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে। প্রথমবারের মতো যা জাপানের প্রতিরক্ষা এলাকা অতিক্রম করেছে। প্রেসিডেন্ট শিনজো আবে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটি ভয়ানক ও অগ্রহণযোগ্য।’ অন্যদিকে চলতি বছর ৩১ আগস্ট আবে জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয় ২ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেছেন। যেটি বিগত পাঁচ বছর ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে।

উল্লেখ্য, জাপান মার্কিন অস্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় ক্রেতা। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপান সর্বাধিক অস্ত্রের ক্রেতা ছিল। ব্লুমবার্গের তথ্য মতে, জাপান যুদ্ধবিমান,ক্ষেপণাস্ত্র, সামরিক ইলেকট্রনিক্স ও যন্ত্রাংশ কিনতে ৩ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে।

লকহিড জাপানে প্রায় ৪২টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সরবরাহের অর্ডার পেয়েছে। যার পেছনে প্রায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হবে, এটি পেন্টাগনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রোগ্রাম। লকহিড মূলত ২০ শতাংশ অর্ডারের জন্য জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্রদের উপর নির্ভরশীল।

স্টকহোমের আন্তর্জাতিক শান্তি ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে শীর্ষ অস্ত্র আমাদানিকারক। দেশটি মোট প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রায় ৬০ শতাংশ আমদানি করে থাকে। স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশটি বেশিরভাগ অস্ত্র রাশিয়া থেকেই আমদানি করেছে তবে সম্প্রতি লকহিড ভারতে এস-৯২ হেলিকপ্টার ও সি-১৩০জে যুদ্ধবিমান সরবরাহ করার জন্য এরই মধ্যে চুক্তি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব অ্যাশ কার্টার ২৯ আগস্ট ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের মনোহর পরিকরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। দুই দেশ সামরিক প্রকল্পগুলোতে যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া প্রতিরক্ষা ব্যয়ে আগের বছর জাপান ও চীন থেকে ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি ব্যয় করেছে।

প্রেসিডেন্ট পার্ক জিয়ুন হাই চলতি বছর আরো বেশি ব্যয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। অক্টোবরের এক ঘোষণায় প্রায় ৪ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। লকহিডের সহায়তায় দক্ষিণ কোরিয়া টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিচিউড এরিয়া ডিফেন্স মিসাইল নির্মাণ করেছে। বেইজিং দক্ষিণ কোরিয়ার টার্মিনাল তৈরিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মে মাসে প্রেসিডেন্ট ওবামা ভিয়েতনামের ওপর থেকে অস্ত্র ক্রয়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে দেশটি অস্ত্র কেনায় আগ্রহী হচ্ছে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অনেকগুলো দেশ তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করছে যার ফলে আগামীতে এশিয়া অস্ত্র ও যুদ্ধবিমান বিক্রির সম্ভাবনাময় বৃহৎ বাজারে পরিণত হচ্ছে।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত