সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৬:৫৪

কলকাতায় অবৈধ অস্ত্র কারখানার সন্ধান, বিপুল অস্ত্র উদ্ধার, আটক ৫

কলকাতার উপকণ্ঠ রবীন্দ্রনগরে অস্ত্র তৈরির বড় ধরনের বেআইনি কারখানার সন্ধান পেইয়েছে সেখানকার গোয়েন্দা পুলিশ। এই কারখানাতে পাওয়া গেছে বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার।

মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সিআইডি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের একটি দল গোপন সূত্রে খবর পেয়ে হানা দেয় রবীন্দ্রনগরের ভাণ্ডারিপাড়া কানকুলি এলাকার ওই কারখানায়৷ সেখান থেকেই বাজেয়াপ্ত করা হয় ৯৫টি ওয়ান শটার পাইপগান, ৪ টি ডবল ব্যারেল পাইপগান, ২ টি নাইন এমএম পিস্তল, ৫৭ রাউন্ড গুলি, ৭ টি মোবাইল এবং নগদ ১০ হাজার টাকা। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত লেদ মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ।

গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই কারখানার মালিক আফতাব হোসেন (৪০) সহ পাঁচ জনকে৷ গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দু’জন বিহারের মুঙ্গেরের বাসিন্দা৷ অর্থাৎ শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গই নয়, রবীন্দ্রনগরের ওই কারখানা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কিনে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করত আন্তঃরাজ্য অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। এই চক্রের বাকি চাঁইদের ধরতে এদিন রাত পর্যন্ত ধৃতদের দফায় দফায় জেরা করেন সিআইডি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের কর্তারা। বুধবার ধৃতদের হাজির করা হয়েছে আদালতে।

গত রোববার বাসন্তী থেকে অস্ত্র পাচার করার অভিযোগে এক পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জেরা করে জানা যায়, রবীন্দ্রনগরেই তৈরি হচ্ছে যাবতীয় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র। সেই কারখানা থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র কিনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করত বাসন্তীর ধৃত পাচারকারী।

তার দেয়া তথ্য ধরে এদিন সিআইডির স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল আচমকাই হানা দেয় মহেশতলা পুরসভার অন্তর্গত ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাণ্ডারিপাড়া কানকুলি এলাকায়। রেললাইন লাগোয়া অত্যন্ত নির্জন ওই এলাকায় ছিল আফতাব হোসেনের অস্ত্র কারখানা।

সিআইডির গোয়েন্দাকর্তারা জানিয়েছেন, রেললাইন লাগোয়া ওই নির্জন জায়গায় এলাকার লোকজন খুব একটা যান না। এর ফলে এত বছর ধরে চলে আসা অস্ত্র তৈরির ওই কারখানা নজরে পড়েনি কারও। আর এলাকার এই নির্জনতাকেই বেআইনি অস্ত্র তৈরির জন্য বেছে নিয়েছিল কারখানার মালিক আফতাব। এ ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্নও ছিল কানকুলির এই নির্জন এলাকা।

এই কারখানা চারদিক থেকে ঘিরে নিয়ে তল্লাশি শুরু করেন গোয়েন্দা পুলিশের কর্তারা। তাতেই ধরা পড়ে যায় বিপুল অস্ত্র ভাণ্ডার। লেদ মেশিন ছাড়াও অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহার করা হত পোর্টেবল কাটার, নাট-বোল্ট এবং ডাইস মেশিন৷ আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি সমস্ত যন্ত্রাংশও আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

কারখানা থেকেই গ্রেফতার করা হয় মালিক আফতাব হোসেন, মহম্মদ আসলাম (৩৮) এবং শেখ এহেতামাসকে। ধৃতদের জেরা করে আন্তঃরাজ্য অস্ত্র ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এতদিন পর্যন্ত পুলিশের কাছে খবর ছিল মুঙ্গের থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কিনে কম দামে তা বিক্রি করা হয় কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু আসলাম ও এহেতামাসকে রবীন্দ্রনগরের কারখানা থেকে হাতেনাতে ধরার পর আন্তঃরাজ্য অস্ত্র ব্যবসার নতুন তথ্য উঠে এসেছে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।

জিজ্ঞাসাবাদে আসলাম ও এহেতামাস জানিয়েছে, আফতাবের রবীন্দ্রনগরের ওই কারখানায় অত্যন্ত কম দামে পাইপগান, নাইন এমএম পিস্তল এবং গুলি কিনতে পাওয়া যেত৷ সেই কারণেই আফতাবের কাছ থেকেই বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি কিনে তা বিক্রি করা হত দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এর পিছনে রয়েছে আন্তঃরাজ্য অস্ত্র ব্যবসায়ীরা।

সেই ব্যবসায়ীদের সন্ধান জানতে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দা পুলিশের কর্তারা। রবীন্দ্রনগরের ওই কারখানা থেকে আটক করা ৭ টি মোবাইল আফতাব ব্যবহার করত শুধুমাত্র আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির অর্ডার নেওয়া এবং বেচা-কেনার জন্য। সেই মোবাইলের সূত্র ধরেও আন্তঃরাজ্য অস্ত্র ব্যবসায়ীদের খোঁজ চালাচ্ছেন গোয়েন্দা পুলিশের কর্তারা।

সূত্রঃ সংবাদ প্রতিদিন

আপনার মন্তব্য

আলোচিত