অনলাইন ডেস্ক

১৫ নভেম্বর, ২০১৬ ২০:১৫

বাংলাদেশের কাছে ‘পাওনা’ দাবি করবে পাকিস্তান!

বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে পাকিস্তানের ১৫০০ কোটি টাকারও অধিক পাওনা রয়েছে দাবি করে সেগুলো ফেরত চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের এক গণমাধ্যম।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে পাকিস্তানের পাওনা টাকাগুলোর মধ্যে কেবল বাংলাদেশের কাছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা (৯.২১ বিলিয়ন পাকিস্তানি রূপি, ৬.৯২ বিলিয়ন বাংলাদেশি টাকা) টাকা পাওনা রয়েছে।

দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাওনা বিষয়ে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে পত্রিকাটি।

পত্রিকাটির ভাষ্য, ৭১ পূর্ববর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের কাছে পশ্চিম পাকিস্তানের যে অর্থ পাওনা ছিল তা বর্তমানে ৭০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অ্যাসেট ভ্যালুয়েশনের মধ্য দিয়ে প্রকৃত পাওনা নিরূপণ করা হয়েছে।

পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংককে উদ্ধৃত করে এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়েছে, সরকারি অফিস, ঋণ, আগাম সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তনের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের কাছে যে টাকা পাওনা ছিল, যে ২০১৬ সালের জুন নাগাদ ভ্যালুয়েশন করে তা ৬শ কোটি ৯২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের কাছে তাদের এই টাকা দাবি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

একইসঙ্গে ৪৭-এর দেশ বিভাগের আগের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে বিবেচনায় নিয়ে দিল্লির কাছেও ৬ বিলিয়ন ভারতীয় রূপি পাওয়ার দাবি করেছে পাকিস্তান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গোল্ড রিজার্ভ, স্টালিং সিকিউরিটিজ, ইন্ডিয়ান সিকিউরিটিজ, রুপি কয়েন এবং দেশভাগের সময় ভারতের মুদ্রায় পাকিস্তানের শেয়ার। মুদ্রা ছাপানোর জন্য পাকিস্তান ভারতকে দেনা পরিশোধ করলেও ভারত সাত দশকেও তা করেনি বলে অভিযোগ করেছে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ। আর এ খাতে ভারতের দেনা ধরা হয়েছে ৪০ মিলিয়ন রুপি।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে থেকে পাওনা অর্থ আদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার।

তারা জানিয়েছে, এরইমধ্যে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে ঠিক কতো টাকা পাওনা রয়েছে, নতুন করে তার বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্য স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান।

স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান কর্তৃক জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে দেশটির আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধানদের কাছে বাংলাদেশ-ভারতের দেনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানতে চাওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরিসমাপ্তিতে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার মূল কারণ ছিল স্বাধিকার, স্বাধীনতা, স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষা ও পাকিস্তানিদের সম্পদ লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। হাজার মাইল দূরে থাকা পশ্চিম পাকিস্তান বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সম্পদ লুণ্ঠন করে তাদের দেশেই সকল ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। দীর্ঘ এ বঞ্চনার প্রতিবাদ করে বাংলাদেশের জনতা। দীর্ঘ মুক্তির সংগ্রাম ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তারপর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে তাদের ন্যায্য পাওনা আদায় নিয়ে যখন বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে আলোচনা-গবেষণা করছিল তখনই পাকিস্তানের পক্ষে থেকে এমন পাওনা দাবির সংবাদ আসলো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত