সিলেটটুডে ডেস্ক

২২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০১

গৃহকর্মী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন ট্রাম্পের মা

নির্বাচনী প্রচারণায় আসার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার স্ত্রী-কন্যা, ব্যবসা ইত্যাদি বিষয়গুলো যত আলোচনায় এসেছে ততটা আলোচনায় আসেনি তার মায়ের পরিচয়টি। মূলত মায়ের পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে চতুর্থ ট্রাম্প। তার মা মেরি অ্যানি ম্যাকলিওডের জন্ম ১৯১২ সালে স্কটল্যান্ডের লিউস দ্বীপের স্টর্নওয়ে শহর থেকে তিন মাইল দূরের টং গ্রামে।

১৮ বছর বয়সে একজন গৃহকর্মী হিসেবে নিউইয়র্কে পাড়ি জমিয়েছিলেন মেরি অ্যানি। এরপর থেকে পাল্টে যেতে থাকে তার জীবন। স্কটল্যান্ডের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় চলে এসেছিল দেশটির লাখো বাসিন্দা। তাদেরই একজন অ্যানি।

১৯৩০ সালে মার্কিন মুল্লুকে পাড়ি জমানোর ৬ বছর পর সফল আবসন ব্যবসায়ী ফ্রেডেরিক ট্রাম্পকে বিয়ে করেন তিনি। ওই সময়ে নিউইয়র্কের সবচে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে ফ্রেডেরিখ ছিলেন অন্যতম। অভিবাসী হিসেবে জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন ফ্রেডেরিকের বাবা। এই দম্পতিরই সন্তান ডোনাল্ড ট্রাম্প আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বসতে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউজের সিংহাসনে।

ম্যারি অ্যানি ম্যাকলিওডের বংশক্রম নিয়ে গবেষণা করেছেন মার্কিন বংশক্রম বিশেষজ্ঞ বিল লসন। তিনি জানান, অ্যানির বাবা প্রথম জীবনে একটি পোস্ট অফিস পরিচালনা করতেন। পরে ছোট একটি দোকানের মালিক হয়েছিলেন তিনি। শহরের অন্য পরিবারগুলোর চেয়ে আর্থিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভাল ছিল তাদের পরিবারের।

তবে বিপত্তি দেখা দেয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। যুদ্ধকালীন এবং তারপরে মারা যায় লিউস দ্বীপের হাজারখানেক মানুষ। তখন থেকে দ্বীপটির আর্থিক অবস্থায় ধস নামে। বিদেশে চলে যেতে শুরু করে সেখানকার যুবক সম্প্রদায়। ১৯১৯ সালে আরো এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাগরে ডুবে নিহত হয় ২০০ সরকারি কর্মচারি।

লসন বলেন, ‘ম্যারি অ্যানি ম্যাকলিওডের পরিবারটি ছিল অত্যন্ত বড়। তারা ছিলেন নয় ভাইবোন।’ এতবড় পরিবার পরিচালনার সামর্থ ছিল না অ্যানির মা-বাবার। তাই শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে হয়েছিল তাকে।

লসন আরো বলেন, ‘আজকের দিনে আপনি হয়তো মনে করতে পারেন, স্কটল্যান্ডের মূল ভূখণ্ডে চলে গেলেই তো হতো। কিন্তু ওই সময়ে বেশিরভাগ লোকই পাড়ি দিয়েছিল কানাডায়। তখন আমেরিকা ভূখণ্ডে সহজেই স্বচ্ছন্দ্য জীবনযাপন করা যেত। অনেকেরই সেখানে আত্মীয়-স্বজন ছিল।’

ট্রাম্পের মায়ের সঙ্গে তখন স্কটল্যান্ড ছেড়েছিল তার আরেক বোন ক্যাথেরিন। তবে দুইজনের স্বভাবে কিছুটা পার্থক্য ছিল বলেও জানান এই বংশক্রম বিশেষজ্ঞ। ক্যাথেরিন প্রথমে এসেছিলেন কানাডায়, সেখান থেকে নিউইয়র্কে। ১৯৩০ সালেই লিউসে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। তবে অ্যানি ভাগ্যের সন্ধানে থেকে যান যুক্তরাষ্ট্রে।

নিউইয়র্কের এক ধনাঢ্য পরিবারে গৃহকর্মীর কাজ নেন তিনি। তবে ‘ওয়াল স্ট্রিট ক্রাশ’ ঘটনার পর মার্কিন অর্থনীতিতে বিপর্যয় দেখা দিলে চাকরি হারাতে হয় তরুণী অ্যানিকে। ১৯৩৪ সালে স্বল্প সময়ের জন্য স্কটল্যান্ডে যান তিনি। এই সময়ের মধ্যে অবশ্য তার সঙ্গে পরিচয় হয় ফ্রেডেরিখ ট্রাম্পের। পরে নিউইয়র্কে ফিরে এসে অভিজাত কুইন্স এলাকায় তার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন অ্যানি এবং যুক্ত হন বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজে।

বর্তমানে তিনজন খালাত ও মামাত ভাইবোন আছে ট্রাম্পের। এদের মধ্যে দুইজনই বাস করেন তাদের পিতৃভূমিতে। তবে তাদের কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। স্কটল্যান্ডের স্থানীয় এক কাউন্সিলর এবং ট্রাম্পের কাজিনদের বন্ধু জন এ ম্যাকলভার বলেন, ‘আমি তাদের পরিবারের সঙ্গে খুব ভালোভাবে পরিচিত। তারা খুবই ভাল ও ভদ্র মানুষ। আমি নিশ্চিত, তারা নিজেদের প্রচারণা চান না এবং এটাও নিশ্চিত এ ব্যাপারে তারা কথা বলতে চাইবেন না।’

১৯৪২ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব পান অ্যানি। ২০০০ সালে ৮৮ বছর বয়সে মারা যান তিনি।

২০০৮ সালে মাতৃসম্পর্কের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে স্কটল্যান্ড গিয়েছিলেন অ্যানির ধনকুবের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, তিন-চার বয়সে মায়ের সঙ্গে লিউসে গিয়েছিলেন তিনি। তবে ওই সময়ের ঘটনা খুব সামান্যই মনে আছে। ওই সফরে মায়ের পিতৃভূমিতে ৯৭ সেকেন্ড সময় কাটান ট্রাম্প।

তার ভাষায়, ‘আমি ছিলাম খুবই ব্যস্ত। তখন আমি সারা পৃথিবীতে আমার ব্যবসা বিস্তৃত করছিলাম। সময় দেয়া ছিল খুব খুব কঠিন। ওই সময়ে আমার বিমান ছিল। আমি আনন্দিত যে সেখানে যেতে পেরেছিলাম।’

লিউসের ওই সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন তার বোন ম্যারিঅ্যানি বেরি। তবে মায়ের জন্মস্থানে নিয়মিতই যোগাযোগ রাখেন অ্যানির এই কন্যা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত