২৩ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ২৩:১৬
ব্রিটিশ নিরাপত্তা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে প্রথমবারের মতো কমিশনার পদে নিয়োগ পেলেন একজন নারী। লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। ক্রেসিদা ডিক নামের এ নারী যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা।
সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া ক্রেসিদা ডিককে লন্ডন পুলিশের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। লন্ডন পুলিশের ১৮৮ বছরের ইতিহাসে ৫৬ বছর বয়সী ডিক-ই প্রথম নারী প্রধান। তিনি বার্নার্ড হোগান-হোর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। পাঁচ বছর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে দায়িত্ব পালনের পর এ মাসেই দায়িত্ব ছেড়েছেন হোগান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আম্বার রুড এবং লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের নেতৃত্বাধীন একটি প্যানেল প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।
দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন কমিশনার ক্রেসিদা ডিক বলেন, “আমি শিহরিত, সম্মানিত বোধ করছি। এটি একটি মহান দায়িত্ব , একটি অসাধারণ সুযোগ।” অক্সফোর্ড থেকে ডিগ্রি নেওয়া ডিক ১৯৮৩ সালে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে যোগ দেন কনস্টেবল পদে। ২০১৫ সালে পররাষ্ট্র বিভাগে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি লন্ডন ও অক্সফোর্ড পুলিশের বিভিন্ন পদে ছিলেন। নতুন দায়িত্বে তাকে লন্ডন পুলিশের প্রায় ৪৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সামলাতে হবে, যাদের জন্য বার্ষিক বরাদ্দ তিনশ কোটি পাউন্ডের বেশি।
অবশ্য এই বরাদ্দ ‘অপর্যাপ্ত’ বলে মনে করেন অনেকে। অবসরে যাওয়ার আগে শেষ বক্তৃতায় বিদায়ী পুলিশ কমিশনার হোগানও বলেছেন, বাজেটের চাপ সামলাতে সামনের দিনে কর্মী সংখ্যা ও অস্ত্র কেনার পরিমাণ কমাতে হবে; যা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুলিশকে পিছিয়ে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের সময় বিক্ষোভকারীদেরও সামলাতে হবে নতুন পুলিশ কমিশনারকে। ট্রাম্পের সফর নিয়ে পুরো যুক্তরাজ্যেই উত্তেজনা চলছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আম্বার রুড বলেন, ক্রেসিদা ডিক একজন ব্যতিক্রমী নেতা। মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্য তার একটি স্বচ্ছ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সেবার পরিসরভুক্ত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্য সম্পর্কে তার জানাশোনা রয়েছে।
আম্বার রুড বলেন, তিনি এখন যুক্তরাজ্য পুলিশের সবচেয়ে চাহিদাপূর্ণ, হাই-প্রোফাইল এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। সন্ত্রাসের উচ্চমাত্রার ঝুঁকি, জালিয়াতি এবং সাইবার ক্রাইমের মতো হুমকির প্রেক্ষিতে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এখানে যৌন নিপীড়ন ও পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের পাশাপাশি সবচেয়ে অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা প্রদানের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ক্রেসিদা’র দক্ষতা মেট্রোপলিটন পুলিশকে ২১ শতকের অপরাধের ধরন মোকাবিলায় উপযোগী করে তুলবে। এতে লন্ডন ও পুরো যুক্তরাজ্যকে সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি সুনিশ্চিত হবে।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, ক্রেসিদা ডিক হবেন মেট্রোপলিটন পুলিশের ১৮৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী কমিশনার। একইসঙ্গে তিনি হবেন এখানকার সবচেয়ে ক্ষমতাবান পুলিশ কর্মকর্তা। এটা লন্ডনের জন্য একটা ঐতিহাসিক দিন। মেয়র হিসেবে আমার জন্য এটা একটা গর্বের দিন।
সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও দশককাল আগে ক্রেসিদা ডিকের নেতৃত্বে এক অভিযানে নিরপরাধ এক ব্রাজিলীয় যুবক পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ২০০৫ সালের জুলাইয়ে দক্ষিণ লন্ডনের স্টকওয়েল আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেটে আত্মঘাতী সন্ত্রাসী ভেবে ২৭ বছর বয়সী ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জন চার্লস দে মেনেজেসকে গুলি করে পুলিশ। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, চার্লসকে তারা জঙ্গি হুসেইন ওসমান ভেবে গুলি করে। ওসমান ও মেনেজেস একই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে থাকতেন। ওই অভিযানের আগের দিন ওসমানসহ চার জঙ্গি লন্ডনের ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক ও পুলিশের উপর হামলা চালানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালায়।
উল্লেখ্য স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড হচ্ছে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় পুলিশ বাহিনী। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮২৯ সালে। এ সংস্থাটি লন্ডন শহরে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করে। সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গেও যুক্ত আছে সংস্থাটি। এছাড়া কূটনীতিক ও ভিআইপি-দের সুরক্ষা প্রদানের মতো রাষ্ট্রীয় নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেয় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড।
আপনার মন্তব্য