সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ জুলাই, ২০১৭ ০১:৫২

ভারতে গরু বিক্রি নিষিদ্ধের আইন স্থগিত

জবাইয়ের উদ্দেশ্যে গরু বিক্রি নিষিদ্ধ করে ভারত সরকারের প্রবর্তিত একটি বিতর্কিত আইন স্থগিত করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এতে করে ভারতে বিজেপি-দলীয় সরকারের প্রয়াস কিছুটা মুখ থুবড়ে পড়ল। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

জবাইয়ের জন্য গরু বিক্রি ও ক্রয় নিষিদ্ধ করে ভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয় গত ২৬ মে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস (রেগুলেশন অব লাইভস্টক মার্কেটস) রুলস, ২০১৭ শীর্ষক এ আইনের বিষয়ে তখন থেকেই আপত্তি তুলেছে ভারতের কয়েকটি রাজ্যের সরকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন।  

ভারতের প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর ও বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচুড়ের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গতকাল দেয়া রায়ে উল্লিখিত আইনটি তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। আদালতের আদেশে বলা হয়, গরু ও মহিষ বিক্রির ওপর নিজেদের জারিকৃত নিষেধাজ্ঞাটি বিজেপি সরকার চাপিয়ে দিতে পারে না।

গত মে মাসে উল্লিখিত আইনটি প্রবর্তনের পর কট্টরপন্থী হিন্দু রাজনৈতিক দলগুলো উত্ফুল্ল হয়েছিল। কিন্তু এ আইন ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। বিশেষত দেশটির গো-মাংস, দুগ্ধ ও চামড়া শিল্প খাতে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেয়।

বিজেপি সরকারের জারিকৃত আইনটির বিরুদ্ধে আদালতে রিট আবেদন করেন ভারতের বেশ কয়েকজন আইনজীবী ও অধিকারকর্মী। আবেদনকারীদের পক্ষে বলা হয়, নতুন এ আইন ভারতের সংবিধানে উল্লিখিত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন করছে। একই সঙ্গে আইনটি ১৯৬০ সালের প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস আইনেরও লঙ্ঘন। কেননা পূর্ববর্তী আইনে বিধিবদ্ধভাবে গরু জবাই অনুমোদন করা হয়েছিল।

আদালতের আদেশের পর রিট আবেদনকারী আইনজীবী আবদুল ফাহিম কুরেশী বলেন, এ রায় আমাদের দেশের কোটি মানুষের জন্য ভালো খবর। সারা বিশ্বে যে শত শত কোটি মানুষ গো-মাংস খান, তাদের জন্যও এটি ইতিবাচক।

ভারতের অনেক অঞ্চলে গো-মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটির ক্যাটল ইন্ডাস্ট্রি বেশ প্রসারিত হয়েছে। ভারতে প্রায় ১৯ কোটি গরু ও ১০ কোটি ৮০ লাখের মতো মহিষ রয়েছে। ভারত প্রতি বছর ৫০০ কোটি ডলারের মাংস রফতানি করে। এ রফতানির সিংহভাগ মহিষের মাংস।  

জবাইয়ের জন্য গরু বেচাকেনা ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর সুবাদে যেসব গাভী দুগ্ধ উত্পাদনে অক্ষম অথবা অতি বুড়ো হয়ে গেছে, সেগুলো বিক্রি করে ডেইরি খামারিরা অর্থসংস্থান করতে পারেন। গরু বেচাকেনার ব্যবসা অনেকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দেয়।

ভারতে গরু বেচাকেনার ব্যবসাটি মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকরাই পরিচালনা করেন। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ও তার নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে গরু বেচাকেনার ব্যবসাটি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। নরেন্দ্র মোদি নিজেই গো-মাংস বেচাকেনা বন্ধের কথা বলেছেন।

মে মাসে নতুন আইন প্রবর্তনের পর থেকে গো-রক্ষার নামে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বেশকিছু হামলা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ‘গো-রক্ষক’ পরিচয়ধারী ডানপন্থী গ্রুপগুলোর এসব হামলার বিষয়ে চলতি মাসের প্রথম দিকে সারা ভারতে ‘নট ইন মাই নেম’ স্লোগানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

আইনজীবী আবদুল ফাহিম কুরেশী বলেন, ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই এ আইন করা হয়েছে। প্রাণীর ওপর নৃশংসতা রোধে ভারতে আগে থেকেই আইন রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন আইনের কোনো প্রয়োজন ছিল না।

বিজেপি সরকারের প্রণীত আইনের বিরুদ্ধে এর আগে স্থগিতাদেশ দেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের মাদুরাই বেঞ্চ। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গতকাল ওই স্থগিতাদেশ দেশজুড়ে বিস্তৃত করেন।

দ্য হিন্দু জানিয়েছে, বিজেপি সরকার তাদের প্রণীত আইনের প্রশ্নে কিছুটা পিছু হটেছে। সরকারের পক্ষে এডিশনাল সলিসিটির জেনারেল পিএস নরসিমহা আদালতকে জানিয়েছেন, মানুষের প্রতিবাদের কারণে সরকার আইনটির কিছু দিক পুনর্বিবেচনা করছে। আগস্টের শেষ নাগাদ নতুন আইন প্রণয়ন হবে বলে তিনি জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত