সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ জুলাই, ২০১৫ ০৪:১৮

গ্রিসে গণভোট, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে ‘না’

গ্রিসে গণভোট সম্পন্ন হয়েছে। চলছে ইউরোজনের ঋণদাতাদের শর্ত মেনে নেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে অনুষ্ঠিত গণভোটের ফল গণনা। সর্বশেষ প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী এক তৃতীয়াংশ ভোট গণনা শেষে শতকরা ৬০ শতাংশ ভোটার 'না' ভোটের পক্ষে রায় দিয়েছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল-প্লেটো থেকে শুরু করে দার্শনিক সক্রেটিস, লেখক হোমার, ইতিহাসের জনক হিরোডোটাসসহ বিশ্বজুড়ে খ্যাতিসম্পন্ন পণ্ডিতদের তালিকায় গ্রিসবাসীর নাম শেষ হওয়ার নয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রাচীন সভ্যতার এই দেশ শুধু গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর নয়, অর্থনৈতিক শৌর্য-বীর্যেও ছিল বিশ্বসেরা।

খ্রিস্টের জন্মের চতুর্থ থেকে পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত গ্রিসের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ছিল শিল্পপূর্ব উন্নত অর্থনীতিগুলোর একটি। ইতিহাসবিদদের মতে, ওই সময় একজন গ্রিক কর্মীর গড় মজুরি দিয়ে প্রায় ১২ কেজি গম কেনা যেত। রোমান যুগে দেশটির শ্রমিকদের গড় মজুরি ছিল মিসরীয়দের তিন গুণ। সেই দেশ আজ মহাসংকটে, অর্থের অভাবে। অন্নবস্ত্রের খোঁজে নাগরিকরা ছাড়ছে দেশ।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করে গ্রাম্য সমাজে 'একঘরে' করে রাখার মতো অপমানজনক শর্ত দিয়ে যাচ্ছে ইউরোজোনের অন্য দেশগুলো। বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী বামপন্থী সরকার তবু মাথা নোয়াতে রাজি নয়।

রাষ্ট্রের মালিক জনগণের কাছে তারা ফিরে আসে গণভোট নিয়ে- যেখানে 'না' জয়যুক্ত হলে ইউরো জোন থেকে বহিষ্কৃত হবে গ্রিস। অর্থাৎ গ্রিসকে আলাদা মুদ্রায় ফিরতে হবে। আর 'হ্যাঁ' জিতলে প্রধানমন্ত্রী হারাবে গ্রিসবাসী।

গ্রিসের নাগরিকরা ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত গণভোটে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এবং বামপন্থী নেতা আলেক্সিস সিপ্রাসের ডাকে সাড়া দিয়ে না ভোট প্রদান করে। সিপ্রাসের রাজনৈতিক দল সিরিজা পার্টি শুরু থেকেই না ভোটের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। তাদের মতে, ইউরোপের পাওনাদাররা গ্রিসকে ব্ল্যাকমেইল করে এবং পরে চাপ সৃষ্টি করে নতুন শর্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে চায়।

আর্থিক পুনরুদ্ধারে (বেইলআউট) জন্য দাতাদের দেওয়া শর্তগুলো মর্যাদাহানিকর বলে সমালোচনা করে আসছে গ্রিসের ক্ষমতাসীন সিরিজা পার্টি। গণভোটে শর্তগুলো নাকচ হলে তা দাতাদের সঙ্গে দ্রুত নতুন চুক্তিতে যেতে সরকারকে সুযোগ করে দেবে বলে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব জানান।

প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস রোববার বলেছেন, ‘না’ ভোটের বিজয় ‘শুধু ইউরোপে থাকা নয়, ইউরোপে মর্যাদা নিয়ে থাকতে’ গ্রিসের সংকল্পের প্রতিফলন ঘটাবে।

অবশ্য আন্তর্জাতিক দাতারা সতর্ক করেছেন যে, ‘না’ ভোটের বিজয়ে গ্রিক ব্যাংকগুলোর তহবিল বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং তা গ্রিসকে একক মুদ্রা ইউরো থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথে নিয়ে যাবে। রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় শুরু হয়ে একটানা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে।

গ্রিসের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল সাকেলারিডিস বলেন, ‘না ভোটের প্রতি গ্রিসের জনগণের সমর্থন সরকারের অবস্থান শক্ত করছে। এতে করে ইউরোপের সামনে নিজেদের যুক্তিগুলো জনগনের সমর্থন পেল।’

অন্যদিকে ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘হ্যাঁ’ ভোট না দিলে গ্রিসকে ইউরোপ থেকে বেরিয়ে হয়ে যেতে হতে পারে। এছাড়া, এটি ইউরোপের দাতাদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

এদিকে এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর সোমবার থেকে আবারও খুলে দেওয়া হচ্ছে দেশটির সব ব্যাংক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত