সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ আগস্ট, ২০১৮ ১৮:০৩

রোহিঙ্গা নির্যাতন: বিচার চাইলেন আসিয়ানের এমপিরা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১৩০ জনের বেশি আইনপ্রণেতা (এমপি) মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার বিচারের দাবি জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক জাতিগোষ্ঠীকে উদ্দেশ করে তাঁরা এ দাবি জানান।

এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, পূর্ব তিমুরের ১৩২ এমপিসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংগঠন আসিয়ানের ২২ জন সদস্য এক যৌথ বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) এ বিষয়ে জানাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানান।

আগামীকাল শনিবার (২৫ আগস্ট) মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের এক বছর পূর্ণ হবে। আর আজ শুক্রবার গণমাধ্যম ইউএনবি সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

তবে জাকার্তা থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মিয়ানমারে আইসিসির তদন্তের অধিকার নেই। তাই কেবল নিরাপত্তা পরিষদই আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারে তদন্ত চালাতে পারে।  

অ্যাসোসিয়েট প্রফেশনালস ফর হিউমেন রিসোর্সের চেয়ারপারসন এবং মালয়েশিয়ার সংসদ সদস্য চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের আজ এক বছর হয়ে গেছে। কিন্তু এত দিনেও আমরা এই নৃশংসতার বিচার দেখতে পাইনি। যেহেতু মিয়ানমার নিজেদের ব্যাপারে তদন্ত করতে পারে না এবং তারা চায়ও না, আমরা এখন এমন অবস্থায় আছি যেখানে আন্তর্জাতিক মহলকে অবশ্যই বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

সান্তিয়াগো আরো বলেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানাতে আমি আমার ১৩১ সহকর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছি। যারাই এই নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত, তাদের আমরা এর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে দিতে পারি না। তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

নিজ নিজ দেশের সরকারের হয়ে আইনবিদরাও এই বিচারের দাবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এ ছাড়া মিয়ানমারে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ইয়াংহি লিকে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানান তাঁরা।

যদিও মানবাধিকার সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের বিশ্বাসযোগ্য প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। মিয়ানমার সরকার তার সবই অস্বীকার করেছে।

নেপিদোতে তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল মিয়ানমার সরকার। তবে এ ধরনের কমিশন গঠন করার ইতিহাস মিয়ানমারের আরো রয়েছে, যেগুলোর কখনই সত্যিকারের কোনো বিচার হয়নি।

এ ধরনের বিচারহীনতা কাচিন ও শানের মতো অন্য নৃগোষ্ঠীর ওপরও প্রভাব ফেলছে। তাদের ওপরেও সেনাবাহিনী যুদ্ধাপরাধ করছে, শরণার্থী হচ্ছে হাজারো মানুষ।

অ্যাসোসিয়েট প্রফেশনালস ফর হিউমেন রিসোর্সের বোর্ড সদস্য এবং ইন্দোনেশিয়ার হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য ইভা কুসুমা সুন্দরী বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কার্যক্রমের সময় পেরিয়ে গেছে। তাদের কার্যক্রম কেবল আন্তর্জাতিক চাপ এড়াতে পরিচালিত হয়েছে, দোষীদের বিচারে নয়। আসিয়ানের দেশগুলোকে সত্যিকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন এখন আঞ্চলিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে, এটা এখন মানবাধিকার রক্ষার বিষয়। আমাদের কোনো সদস্য দেশের এই ধরনের নৃশংসতার জন্য কোনো শাস্তি হবে না, এটা আমরা হতে দিতে পারি না।’  তিনি জানান, মানবাধিকারের হয়ে রোহিঙ্গাদের পক্ষে এ অঞ্চলের সমর্থন প্রকাশে কথা বলতে শতাধিক বেশি সংসদ সদস্য ইচ্ছা পোষণ করেছেন।

ইভা কুসুমা সুন্দরী বলেন, ‘আমরা আমাদের কণ্ঠগুলোকে একত্র করছি। যারা এসব নৃশংসতার বিচার চায়, তাদের একত্র করছি।’

গত বছরের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর এই নৃশংস হামলা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের ওপর হত্যা, ধর্ষণসহ সব ধরনের অত্যাচার চালানো হয়।জীবন বাঁচাতে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। আগামীকাল এক বছর হয়ে গেলেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন বা বিচার নিশ্চিত করার কোনো অগ্রগতি করেনি মিয়ানমার সরকার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত