সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ২৩:৫৬

নেতাজীর গোপন নথি প্রকাশ

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা সুভাষ চন্দ্র বসু যিনি নেতাজী নামে পরিচিত ছিলেন তার নিখোঁজ হওয়ার ঠিক সত্তর বছর পূর্তিতে তার সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার।

গত শতকের মাঝামাঝিতে অন্তর্ধানের পর থেকে রহস্যে ঢাকা নেতাজি সংক্রান্ত ৬৪টি গোপন নথি প্রকাশ করা হয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র শুক্রবার জানিয়েছেন।

নেতাজির ত্রিশের দশকের কর্মকাণ্ড থেকে ১৯৪১ সালে ভারতে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে তার পালিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সংবলিত এসব নথি পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর নেতাজির পরিবারের উপর ‘গোয়েন্দা নজরদারি’ সংক্রান্ত কিছু নথিও রয়েছে।  

কলকাতার ১১৩ এপিসি সড়কে কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) অফিসে কলকাতা পুলিশ যাদুঘরে ফাইলগুলো রাখা হয়েছে।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ সাংবাদিকদের বলেন, “ফাইলগুলো প্রকাশ করার আগে কিছু কাজ করতে হয়েছে। ৬৪টি নথিতে ১২ হাজার ৭৪৪টি পৃষ্ঠা আছে এবং প্রকাশ্যে আনার আগে সেগুলো ডিজিটাইজড করা হয়।”

মূল ফাইলগুলো কলকাতা পুলিশ মিউজিয়ামে কাচ দিয়ে ঘেরা একটি কেবিনেটে রাখা হবে বলে জানান তিনি।

একটি কমপ্যাক্ট ডিস্ক আকারে ডিজিটাইজড ফাইলগুলো শুক্রবার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নেতাজির ভাতিজার ছেলে চন্দ্র কুমার বোস এবং তার বড় ভাইয়ের পুত্রবধূ সাবেক এমপি কৃষ্ণা বোস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি ছিলেন কৃষ্ণা, তার ছেলে হার্ভার্ড অধ্যাপক সুগত বোস বর্তমানে পার্লামেন্টে তৃণমূলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন।

শুক্রবার যাদুঘরটি শুধু নেতাজির পরিবারের সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীদের উন্মুক্ত করা হয়। সোমবার থেকে নথিগুলো দেখার সুযোগ পাবেন সাধারণ মানুষ।

গত ১১ সেপ্টেম্বর এসব গোপন নথি প্রকাশের ঘোষণা দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নেতাজিকে নিয়ে সেদিন তৃণমূল নেত্রী মমতা বলেন, “ভাবতে অবাক লাগে, আমরা তার জন্মদিন জানি, মৃত্যুদিন জানি না। আদৌ মারা গেছেন কি না, সেটাও জানি না।”

সর্বভারতীয় কংগ্রেসে নেতৃত্ব দেওয়ার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আজাদ হিন্দ ফৌজ গড়ে জাপানের সঙ্গে ভিড়ে ভারতকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করতে সশস্ত্র লড়াইয়ে নামা সুভাষ বসুর পরিণতি কী হয়েছে, তা এখনও অজানা। এ নিয়ে রহস্যজাল ছড়িয়েছে গত অর্ধ শতাব্দীজুড়ে।

বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে বলে একটি কথা প্রচলিত থাকলেও তার কোনো অকাট্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি কেউ।

ইতিহাসবিদ সুগত বোস তার ‘হিজ ম্যাজেস্টিজ অপোনেন্ট’ বইয়ে লিখেছেন, ১৯৪৫ সালের ১৮ অগাস্ট বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যু হয়েছে।

নেতাজির মৃত্যুরহস্যের অনুসন্ধানে গঠিত শাহনওয়াজ কমিশন, খোসলা কমিশন এবং মুখোপাধ্যায় কমিশন নিয়ে আলোচনাও ছিল তার বইয়ে।

একমাত্র মুখোপাধ্যায় কমিশন বলেছিল, নেতাজির মৃত্যু সনদ (ডেথ সার্টিফিকেট) নেই। তাইওয়ান সরকারের বক্তব্য ছিল, ওই দিনে বিমান দুর্ঘটনার কোনো রেকর্ড তাদের হাতে নেই।

সুগত লিখেছেন, ঘটনার দুদিন আগে জাপান আত্মসমর্পণ করে, ফলে তখন তাদের অধীনে থাকা তাইওয়ানও ছিল টালমাটাল। বিমান দুর্ঘটনার নথি না-ই থাকতে পারে।

মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আদর্শিক বিরোধ নিয়েই দুই মেয়াদে কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন বাঙালি সুভাষ বসু। গান্ধীর অহিংসার পরিবর্তে তিনি ছিলেন সশস্ত্র লড়াইয়ের পক্ষপাতী।

পরে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। স্বাধীনতার প্রশ্নে তার আহ্বান ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের আজাদী দেব’ আজও স্মরণ করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইঙ্গ-মার্কিন জোটের বিরুদ্ধশক্তি জাপানের সহযোগিতা নিয়ে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ গঠন করে ভারতে স্বাধীন করতে যুদ্ধে নেমেছিলেন সুভাষ বসু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান-জার্মানের পরাজয়ের পর তার হদিস আর মেলেনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত