আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৩ মে, ২০২০ ১২:২৫

করোনার ভ্যাকসিন তৈরির আগেই অধিকাংশ মানুষ আক্রান্ত হবে, আশঙ্কা গবেষকের

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভ্যাকসিন তৈরির নানা প্রচেষ্টার মধ্যে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই প্রান সংহারক এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট এক সংক্রামক রোগ গবেষক। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, সংক্রমণের প্রথম ধাপে অবস্থান করছে করোনাভাইরাস। এখনই ঘরে থাকার আইন শিথিল করলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ গবেষণা ও পলিসি কেন্দ্রের পরিচালক ডা. মাইকেল অস্টারহোম বলেছেন, প্রাথমিক প্রাদুর্ভাবে নিউইয়র্ক সিটির মতো শহরে পাঁচ জনের মধ্যে একজন আক্রান্ত হয়েছেন। এটির করোনার হানার সামান্য চিত্র, আরও কঠিন পরিস্থিতি আসার বাকি রয়েছে।

সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডের সম্পাদকীয় সভায় অস্টারহোম বলেন, এই জঘন্য ভাইরাসটি যতক্ষণ না সবাইকে সংক্রামিত করছে ততক্ষণ অব্যাহত থাকবে। জনসংখ্যার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশকে আক্রমণ করার আগে এটির গতি কমবে না। এই সংখ্যায় সংক্রামিত হওয়ার পর মানুষের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটির সৃষ্টি হবে এবং ভাইরাসের সংক্রমণকে থামিয়ে দেবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, যদি এই গ্রীষ্মে করোনার প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করে তাহলে এটি একটি মৌসুমি ফ্লুর মতো প্যাটার্ন অনুসরণ করছে। যা মৌসুমি ফ্লু হিসেবে ফিরে আসবে।

১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারি বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশকে অসুস্থ করেছিল। প্রাদুর্ভাবের প্রথম পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি, শিকাগো সহ বিভিন্ন শহরে মারাত্মক আঘাত হেনেছিল। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে সেটি দেশজুড়ে আরও মারাত্মক হয়ে উঠেছিল।

তার কথায়, যদি কোভিড-১৯ শুধু শরৎকালে ফিরে আসে। তাহলে এই সময়ে হাসপাতালগুলো পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে এবং সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো এশিয়ার দেশগুলো করোনার প্রথম পর্যায় ঠেকিয়ে দিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুত পরীক্ষার জন্য প্রশংসিত হয়েছে। তবে সেখানে দ্বিতীয় পর্যায়ে আবার সংক্রমণ হতে পারে।

অস্টারহোম বলেন, লোকসংখ্যার ৫ থেকে ২০ শতাংশ লোক সংক্রামিত হওয়াতে আমাদের এতটা ব্যথা, যন্ত্রণা, মৃত্যু ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে। এই সংক্রমণ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।

এখনও কোভিড-১৯ ও ফ্লুর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সংক্রামক রোগ গবেষণা ও মহামারির তুলনা করে একটি কেন্দ্র জানিয়েছে, কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার গড় সময়কাল পাঁচ দিন। অপরদিকে ফ্লুর গড় আক্রান্তের সময় মাত্র দুই দিন। আক্রান্ত হওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় এবং সংক্রমণের উচ্চ হারের কারণে কোভিড-১৯ ফ্লুর চেয়ে আরও সহজে ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার সকাল পর্যন্ত করোনায় বিশ্বব্যাপী নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৯২ হাজার ৮৮৬ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩ লাখ ৪২ হাজার ৩৩৫ জন। যুক্তরাষ্ট্রে নিহতের সংখ্যা ৮৩ হাজার ছাড়িয়েছে, আক্রান্ত ১৪ লাখ পার হয়েছে।

অস্টারহোম বলেন, জনগণের শরীরে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো কার্যকর ভ্যাকসিন এই সংক্রমণকে ধীর করতে পারে। আর যদি কোনো ভ্যাকসিন কাজ করেও তবে তা কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে সেটিও অজানা।

মার্কিন এই গবেষক জানান, আমাদের এই সত্যের মুখোমুখি হতে হবে যে সংক্ষিপ্ত আকারে ভ্যাকসিন তৈরির কোনো ম্যাজিক বুলেট নেই, যা দ্রুত এটি সরিয়ে ফেলবে। আমাদেরকে এই ভাইরাস সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। কিন্তু আমরা মোটেই সেই আলোচনা করছি না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত