সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ অক্টোবর, ২০১৫ ১৭:৫৫

জামালপুরের ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক শান্তি কমিটির সদস্য ও সাবেক জামায়াত নেতা আইনজীবী শামসুল হক ও এস. এম. ইউসুফসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

তাদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়সহ হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জামালপুরের আইনজীবী শামসুল হক, এসএম ইউসুফ, আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ, আবদুল মান্নান, আবদুল বারী, মোহাম্মদ হারুন, আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫ অভিযোগ দাখিল করেছিলো রাষ্ট্রপক্ষ।

আসামীদের বিরুদ্ধে রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটি গঠন, জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজের হোস্টেলে নির্যাতন কেন্দ্র স্থাপন করে ১০ হাজার মানুষেকে হত্যা এবং নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ আনা হয়।

দু’পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, আদালতে গ্রেফতার ২ আসামী শামসুল হক ও এস. এম. ইউসুফকে তাদের অপরাধ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন। ওই বিবৃতির প্রেক্ষিতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে ১৮ নভেম্বর।

৮ আসামীর মধ্যে দুজন আটক আর ৬ পলাতক থাকার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে আইন অনুযায়ী পলাতক আসামীদের অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে।

বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল সোমবার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য শুরুর জন্য ১৮ নভেম্বর দিন ঠিক করে দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কোনো নথি দেওয়ার থাকলে এই সময়ের মধ্যে তা আসামিপক্ষকে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। আর আসামিপক্ষের কোনো সাক্ষ্য বা নথি দিতে হলে সেই তালিকা ও তথ্যও ওই সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে হবে।

এ মামলার আট আসামি হলেন- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক শরীফ আহাম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. আশরাফ হোসেন, মো. আব্দুল মান্নান, মো. আব্দুল বারী, হারুন, মো. আবুল হাশেম, অ্যাডভোকেট মো. শামসুল হক ওরফে ‘বদর ভাই’ এবং এস এম ইউসুফ আলী।

এদের মধ্যে গ্রেপ্তার অ্যাডভোকেট শামসুল ও এস এম ইউসুফ আলীকে অভিযোগ গঠনের জন্য এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আদালতে দাঁড়িয়ে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।

আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল, ব্যারিস্টার তুরীন আফরোজ, জাহিদ ইমাম ও রেজিয়া সুলতানা চমন।

দুই আসামি শামসুল হক ও ইউসুফ আলীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। এ ছাড়া পলাতক আসামি আশরাফ হোসেন, শরীফ আহমেদ ও আব্দুল মান্নান পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হলেন আব্দুস সোবহান তরফদার। আর পলাতক আব্দুল বারি, হারুন ও আবুল হাশেম পক্ষে মামলা লড়বেন কতুবউদ্দিন আহমেদ।

অভিযোগ গঠনের আদেশের পর তুরীন আফরোজ বলেন, “আদেশের আগে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত দুই আসামিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- তারা দোষী না নির্দোষ। তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে। আদালত বলেছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় অভিযোগ গঠন করা হল।”

চলতিবছর ২৯ এপ্রিল এই আট আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকউশনের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পুলিশ শামসুল ও ইউসুফকে গ্রেপ্তার করে। নিয়ম অনুযায়ী বাকিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও তারা তা করেনি।

গ্রেপ্তার শামসুল হক জামালপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির এবং সিংহজানি স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক ইউসুফও একসময় জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।

এই দুইজন একাত্তরে রাজাকার বাহিনীতে এবং বাকি ছয়জন আলবদর বাহিনীতে ছিলেন বলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার অভিযোগ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত