সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ১০:২২

আট বছরেরও কার্যকর হয়নি মঈনুদ্দীন-আশরাফের মৃত্যুদণ্ড

রায় ঘোষণার আট বছরেও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী পলাতক চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি। এ দুই ঘাতক বিদেশে অবস্থান করায় তাদের দণ্ড কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না।

তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে আশরাফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে এবং মঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তাদের অপরাধ ও সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য জানার পরও তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিভিন্ন দেশ থেকে পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সেল গঠনের পরও কাউকেই ফেরানো সম্ভব হয়নি।

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এই দুই ঘাতককে ফিরিয়ে আনার অগ্রগতির দাবি করেছেন। তিনি বলছেন, সম্প্রতি এ নিয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে আমি এ দুইজনকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দাবি করেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, আমরা যেন ফর্মালি (আনুষ্ঠানিক) এই দাবি করি। আমি তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ফর্মালি দাবি করব।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, পলাতক আশরাফুজ্জামান ও মঈনুদ্দীনের সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার পর এখন তাদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আশা করি, দ্রুত তাদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবে।

তিনি আরও বলেন, রায় বাস্তবায়ন না হলে বিচারের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে। পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তদারকি সেল গঠন করে। এ সেলের অন্যতম সদস্য ও তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন, পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্যোগে কমিটি গঠন হয়। এ কমিটির প্রধান একজন ডিআইজি। করোনার কারণে গত দুই বছর কোনো বৈঠক হয়নি। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।

রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। তবে ওই হত্যার মূল খলনায়ক ছিলেন চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনার নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা। এ নৃশংস অপরাধের জন্য তারা ফাঁসির যোগ্য। তাদের মৃত্যুদণ্ড না হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না।

ফেনীর দাগনভূঞা থানার চাঁনপুর গ্রামে মঈনুদ্দীনের বাড়ি। তার বাবার নাম দেলোয়ার হোসাইন। একাত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের ছাত্র মঈনুদ্দীন দৈনিক পূর্বদেশের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসাবেও কাজ করেন। পাকিস্তানি হানাদারদের সহযোগিতার জন্য গড়ে তোলা আলবদর বাহিনীতে তাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ দায়িত্ব দেওয়া হয়। যুদ্ধের শেষভাগে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মঈনুদ্দীন পালিয়ে পাকিস্তান চলে যান। সেখান থেকে যুক্তরাজ্যে যান। এখন পর্যন্ত তিনি লন্ডনেই অবস্থান করছেন। একাত্তরে পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে থাকার কথা নিজের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে স্বীকার করেছেন তিনি। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চৌধুরী মঈনুদ্দীন বলেছিলেন, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হবেন না। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল একটি কৌতুক। সাজানো বিচার করা হচ্ছে।

আরেক খুনি আশরাফুজ্জামান খানের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের চিলেরপাড় গ্রামে। বাবার নাম আজহার আলী খান। ১৯৬৭ সালে সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশের পর ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফুজ্জামান ঢাবির ইসলামি স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন।

এই দুই ঘাতক আত্মসমর্পণ না করায় তারা আপিলের সুযোগ হারায় এবং তাদের ফিরিয়ে এনে এখনও দণ্ড কার্যকর করা যায়নি।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। এতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত