সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ মে, ২০১৬ ০০:৩৯

প্রস্তুত ফাঁসির মঞ্চ, প্রস্তুত কারা কর্তৃপক্ষও

মানবতাববিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ফাঁসির মঞ্চে টানানো হয়েছে নতুন শামিয়ানা। আনা হয়েছে ম্যানিলা রশি। সেই সঙ্গে প্রস্তুত রাখা হয়েছে দুই জল্লাদকে।

মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ পিটিশন খারিজ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে সেই পূর্ণাঙ্গ রায় সোমবার প্রকাশিত হয়। বিকেলে তা পাঠানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী জানান, সোমবারই এ রায় বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

ট্রাইব্যুনাল হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছানোর পর নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ।

পূর্ণাঙ্গ রায় ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে কারাগারে যাওয়ার পর অভিযুক্তকে পড়ে শোনানো হয়। এখন নিজামী প্রাণভিক্ষা না চাইলে যে কোনো মুহূর্তে তার রায় কার্যকর করা যাবে।

সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কবে কোন সময় রায় কার্যকর হবে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষের বিষয়। তবে প্রাণ ভিক্ষা না চাইলে রায় যেকোনো সময় কার্যকর করা যেতে পারে।

জামায়াতের আমির আমির মতিউর রহমান নিজামীকে গত রোববার রাতে কাশিমপুর থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ-র‌্যাবের একটি দল তাকে কাশিমপুর-২ কারাগার থেকে ঢাকায় আনা হয়।

সোমবার বিকেলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যে মঞ্চে কার্যকর করা হয়েছিল ওই একই মঞ্চে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হবে। সূত্রটি জানায়, এ ফাঁসি কার্যকরের জন্য মঞ্চটির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। রোববার এ মঞ্চে ফাঁসির একটি মহড়া হয়। মহড়ায় ৪ জন জল্লাদ অংশ নেন।

এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

তবে নিজামীর দল জামায়াতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নিজামী তার স্বজনদের জানিয়েছেন, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন না। আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে নিজামীকে ফাঁসির রশিতে ঝোলাতে আইনত আর কোনো বাধা থাকবে না।

গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ খারিজ করে দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এক শব্দের এই রায় ঘোষণা করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় এজলাসে এসে প্রধান বিচারপতি শুধু বলেন, ‘ডিসমিসড’

কারা কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এরই মধ্যে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। নিজামীর রায় কার্যকরই হতে পারে নতুন কারাগারের প্রথম ফাঁসি। তবে কোনো কারণে সেখানে ফাঁসির মঞ্চের সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন না হলে বেছে নেয়া হতে পারে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের ফাঁসির মঞ্চেই তার দণ্ড কার্যকর করা হবে। তবে কাশিমপুর কারাগার থেকে কেরানীগঞ্চে না নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়ায় সেখানেই ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাবনা জোড়ালো হয়ে উঠেছে।

নিজামীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি চুড়ান্ত রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।১৫ মার্চ পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করেন দেশের এই সর্বোচ্চ আদালত। ওইদিনই আপিল বিভাগের এই রায়ের কপি পেয়ে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

লাল সালুতে মুড়ে এই মৃত্যু পরোয়ানা ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার পর ট্রাইব্যুনাল থেকে পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখান থেকে পরদিন সকালে পরোয়ানা যায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে।

নিয়ম অনুযায়ী রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। মৃত্যু পরোয়ানা হাতে পেয়ে নিজামীকে তা পড়ে শোনানো হয়। ওই পরোয়ানার ভিত্তিতেই শুরু হয় সাজা কার্যকরের প্রস্তুতি।

আইন অনুযায়ী রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ পান নিজামী। ১৫ দিন শেষ হওয়ার একদিন বাকি থাকতে গত ২৯ মার্চ সকালে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নিজামীর আইনজীবীরা রিভিউ আবেদন জমা দেন। ৭০ পৃষ্ঠার মূল রিভিউর আবেদনের সঙ্গে মোট ২২৯ পৃষ্ঠার নথিপত্রে তার দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ৪৬টি (গ্রাউন্ড) যুক্তি তুলে ধরা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।

ট্রাইব্যুনালে নিজামীর বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতাসহ আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ১, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি আটটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়।

২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার করার পর একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী হলেন পঞ্চম যুদ্ধাপরাধী, যার সর্বোচ্চ সাজার রায় কার্যকরের পর্যায়ে এসেছে। এটি দ্বিতীয় মামলা, যেখানে বুদ্ধিজীবী হত্যায় দায়ে শেষ বিচারেও আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত