সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ মে, ২০১৬ ০১:২৪

প্রাণভিক্ষা ‘চাইবেন না’ নিজামী, যে কোনো সময় ফাঁসি

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর  আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর এখন সময়ে ব্যাপার মাত্র।  রিভিউ আবেদন খারিজের কপি কারাগারে পৌঁছানোর পর ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রস্তুতিও নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের সকল প্রকিয়াও সম্পন্ন করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। এখন বাকি কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া।

তবে নিজামী প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলে জানিয়েছে তার পরিবার। দলের পক্ষ থেকেও একই বক্তব্য দেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার নিজামীর স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়ে কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করেন। পরে নিজামীর বড় ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মুমিন বলেন, “তিনি (নিজামী) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না।  জামায়াতে ইসলামীও এক বিবৃতিতে একই কথা জানায়।

সোমবার রায় প্রকাশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, নিজামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে সরকার যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর করতে পারে। আর প্রাণভিক্ষা চাইলে কিছু সময় পাবেন নিজামী।

এ প্রক্রিয়া কত দিনে সম্পন্ন হয়? ইতিমধ্যে ফাঁসি কার্যকর হওয়া তিনটি ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোনোটি এক দিন, কোনোটি তিন দিন, কোনোটি পাঁচ দিনের মধ্যে রায় কার্যকর হয়েছে। অবশ্য এই সব ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার। তবে তার ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি ছিল ব্যতিক্রম। ফাঁসি কার্যকরের পর প্রকাশ করা হয় তার রিভিউ খারিজের রায়ের কপি। ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পরদিন (১২ ডিসেম্বর) তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

একই দলের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার দ্বিতীয় ফাঁসি।  ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। রিভিউ খারিজের তিন দিন পর তার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।

কামারুজ্জামানের পর ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর ফাঁসি কার্যকর করা হয় জামায়াতের নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর। তাদের দুজনের রিভিউ আবেদন খারিজ হয় ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর। এর ঠিক তিন দিন পর তাদের দুজনকে পাশাপাশি মঞ্চে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়।

চারজনই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার জন্য সময় নিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ  বলেন, সরকার চাইলে যেকোনো সময়ই ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে।  কারণ সাধারণ আসামিদের ক্ষেত্রে রিভিউর রায় প্রকাশের পর ফাঁসি কার্যকরে সাত থেকে ২১দিনের যে কারাবিধি মানা হয়, তা মানবতাবিরোধীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না।  মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি ফাঁসি মওকুফের আবেদন না করলে সরকার চাইলে আজও ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে।”

বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।  এই রায়ের বিরুদ্ধে নিজামী উচ্চ আদালতে আপলি করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ৬ জানুয়ারি আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন। গত ১৫ মার্চ এর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

এরপর আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন মতিউর রহমান নিজামী। ৫ মে আবেদন খারিজ হওয়ার চার দিন পর আজ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলো্। ইতিমধ্যে রায়ের কপি কারাগারে পৌঁছে গেছে। এখন বাকি রাষ্ট্রপতির ক্ষমাভিক্ষা চাওয়ার প্রক্রিয়া।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত