নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ মে, ২০১৬ ১৬:৫৩

হবিগঞ্জের ৩ রাজাকারের বিরুদ্ধে রায় ‘যে কোন দিন’

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের দুই সহোদর ও তাদের এক চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার প্রেক্ষাপটে এ মামলার রায় ‘যে কোন দিন’ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে আদালত।

বুধবার (১১ মে) প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন।

আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম কিবরিয়া, পারভেজ হোসেন ও এম. মাসুদ রানা।

আসামিরা হলেন- হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান বড় মিয়া, তার ছোট ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাতো ভাই আবদুর রাজ্জাক। এই তিনজনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় চারটি ঘটনায় হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই তিনজনসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করেন। পরে মামলাটি ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের এক আবেদনে গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-২ (বর্তমানে কেবল ট্রাইব্যুনাল-১ চলমান, এবং সব মামলা একটি ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর) দুই সহোদরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর ওইদিন রাতেই বানিয়াচং থেকে তাদের গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

অন্যদিকে ১৭ মে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দুই দিন পর ১৯ মে মহিবুর-মুজিবুরের চাচাতো ভাই রাজ্জাককে মৌলভীবাজারের আথানগিরি পাহাড় থেকে গ্রেফতার করা হয়। একইদিন ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে আসামি করে অভিযোগপত্রও দেয় প্রসিকিউশন।

গতবছর ২৯ সেপ্টেম্বর যুদ্ধাপরাধের চার ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে এই তিন ভাইয়ের বিচার শুরু করে আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২১ অক্টোবর।

চার অভিযোগ
অভিযোগ ১: বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে লাশ গুম করে আসামিরা।

অভিযোগ ২: আসামিরা পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেজর জেনারেল এমএ রবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে।

অভিযোগ ৩: একই দিন খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় আসামিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করে। পরে আল্লাত মিয়ার বোন বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

অভিযোগ ৪: একাত্তর সালের ভাদ্র মাসের যে কোনো একদিন আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালায় আসামিরা। ওই নির্যাতনে পঙ্গু হন আনছার আলী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত