১৩ মে, ২০১৮ ১৯:৪৭
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা আবুল খায়ের গোলাপ মিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
তদন্ত সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে গণহত্যাসহ পাঁচটি অভিযোগ প্রসিকিউশন শাখা থেকে রোববার ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়। এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন- জামাল উদ্দিন আহম্মদ ও শেখ গিয়াস উদ্দিন আহমদ।
বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ রোববার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৪ জুন দিন ধার্য রাখেন।
এই তিন আসামির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে ছয় বীরাঙ্গনাসহ ১৭ জনকে হত্যা, ছয় নারীকে ধর্ষণ, ২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ৩০ জনকে অপহরণ-নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে কি হবে না, সে বিষয়ে আগামী ৪ জুন আদেশের দিন ধার্য রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের পক্ষে জেয়াদ-আল মালুম এবং আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম।
গত ৮ মার্চ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল আটকের পর গোলাপ মিয়া ও জামাল উদ্দিন কারাগারে আছেন। অপর আসামি শেখ গিয়াস উদ্দিন আহমদ পলাতক।
নবীগঞ্জের ১১ নম্বর গজাইনপুর ইউপির বাসিন্দা আবুল খায়ের গোলাপ ওরফে গোলাপ মিয়া ও তার বাবা মতিউর রহমান (মৃত) পাকিস্তানের সময় ছিলেন মুসলিম লীগের সমর্থক। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে গোলাপ মিয়া নবীগঞ্জ থানার গজাইনপুর ইউনিয়নের রাজাকার কমান্ডার হন। তিনি নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক (বর্তমানে বহিস্কৃত)।
২০১৫ সালের ১৭ জুলাই তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলা করেন একই উপজেলার নিশাকুড়ি গ্রামের আকছিরউল্লাহর ছেলে মানিক মিয়া। ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর অপর আসামি জামালউদ্দিনকে একই বছরের ২৩ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, নবীগঞ্জের গজনাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাপ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আলবদর, আল-শামস ও রাজাকার বাহিনীর সংগঠক ছিলেন। গোলাপের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্থানীয় দিনাজপুর হাই স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন স্থান থেকে মেয়েদের ধরে এনে ধর্ষণসহ পাশবিক নির্যাতন করা হয়।
গোলাপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জামালউদ্দিন আহমেদের বাড়ি একই থানার লোগাঁও গ্রামে। অপর সহযোগী শেখ গিয়াসউদ্দিন আহমদ একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি মামলার তদন্তকালে তিনি লন্ডনে পালিয়ে যান।
আপনার মন্তব্য