হাসান মোরশেদ

৩০ জুন, ২০১৫ ১৫:৫২

দাসপার্টির খোঁজে: খসড়া পর্ব-৭

সর্বোচ্চ সম্মানের ঘোষণা দিয়ে ও রাষ্ট্র তাঁকে ভূষিত করেছে তৃতীয় খেতাবে, অথচ সহযোদ্ধাদের কাছে আজও তিনি শ্রেষ্ঠ বীর। বিশাল ভাটি অঞ্চলের বীরশ্রেষ্ঠ। হত্যা আর মরদেহ প্রদর্শনের ধরণে তাকে একাত্তরের যীশুও বলেন অনেকে। চুয়াল্লিশ বছর পর লেখক হাসান মোরশেদ বেরিয়েছেন শহীদ জগৎজ্যোতি দাস আর তাঁর দাসপার্টির খোঁজে। তাঁর সেই অনুসন্ধান ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে সিলেটটুডে২৪ ডট কম-এ। আজ প্রকাশিত হল ৭ম পর্ব

[ষষ্ঠ পর্বের পর...]

দাসপার্টি নিয়ে কাজ শুরু করার প্রথম থেকেই একটা মানুষকে খুঁজছি।

দাসপার্টি সংক্রান্ত প্রকাশনা ও আলাপচারিতা থেকে জেনেছি- জগতজ্যোতি দাসের সবচেয়ে আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা ছিলেন আঠারো/ উনিশ বছরের এক তরুণ; নাম তার ইলিয়াস চৌধুরী। জ্যোতির সাথেই যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং প্রতিটি যুদ্ধে তার সাথে ছিলেন। শেষ যুদ্ধে ও শেষ পর্যন্ত ইলিয়াসই ছিলেন একমাত্র তার সাথে। ইলিয়াস নিজে ও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বুকে কিন্তু জ্যোতিকে একা ফেলে যাননি। তার কমাণ্ডার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে পর, বিলের পানিতে কমাণ্ডারের মৃত শরীর ডুবিয়ে গুলি করতে করতে পিছিয়ে এসেছিলেন- তখনো তার নিজের বুক থেকেও রক্ত ঝরছে।

সালেহ চৌধুরী বলছিলেন- ১৬ নভেম্বর জ্যোতির মৃত্যুর পর ইলিয়াসরা যখন কুঁড়ি-বলনপুরের ক্যাম্পে ফিরে আসেন তখন তার বুকে ক্ষত দেখতে পান। বাম পাশে গুলি লেগে বের হয়ে গেছে আর এক ইঞ্চি দূরে হলেই হৃৎপিন্ড ছেদ করতো। সালেহ চৌধুরী তাকে টেকেরঘাট পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, সেখানে তখন অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে শিলংও পাঠানো যেতো।

কিন্তু ইলিয়াস যেতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান, দাদার খুনের প্রতিশোধ নিতে চান। চিকিৎসার জন্য আর কোথাও না গিয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যান্ডেজ করেই ইলিয়াস যোগ দেন দাসপার্টির পরবর্তী একশনে এবং দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী একমাস যুদ্ধ করতে থাকেন।

দাসপার্টিকে জানার জন্য, জগতজ্যোতি দাসকে বুঝার জন্য ইলিয়াসকে খুঁজে পাওয়ার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু ইলিয়াসের খোঁজ আমি পাইনা। সালেহ চৌধুরী জানেন না, সুনামগঞ্জে খোঁজ করেও পাইনা। শুধু একটা সূত্র পাই যে, আনসার ভিডিপির উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসাবে অবসর নিয়েছেন নেত্রকোনা থেকে। আনসার ভিডিপির এক উর্ধতন কর্মকর্তাকে ধরে অফিসিয়ালী তল্লাশি চালিয়ে ও ইলিয়াসের খোঁজ পাইনা।

হঠাৎ করেই একটা বিকল্প ভাবনা এলো। জেলাওয়ারী সরকারী ওয়েবসাইটে প্রতিটি উপজেলা ও তার অন্তর্গত ইউনিয়নসমূহের চেয়ারম্যানের নাম ও ফোন নম্বর দেয়া আছে। জেনেছিলাম আগে ইলিয়াসের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকৈলছেও ইউনিয়নে। ওয়েবসাইট থেকে নাম্বার নিয়ে ফোন করি সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হক ভূঁইয়াকে।, বিধি বাম- যিনি ফোন রিসিভ করেন তিনি জানান এটি শ্রীমঙ্গলের কারো নাম্বার।

এবার ওয়েবসাইট থেকেই নাম্বার সংগ্রহ করে ফোন দেই বদলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুসেঞ্জিত চৌধুরীর কাছে। বদলপুরেই খৈয়াগোপির বিল যেখানে জগতজ্যোতি শহীদ হয়েছিলেন। এবার কপাল ভালো, নাম্বারটি চেয়ারম্যানেরই। তাকে বিস্তারিত বলি। তিনি না জানলেও ফোন হস্তান্তর করেন তার পাশে থাকা আরেকজনকে- ইনি মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী। দাসপার্টির নয়, অন্য গ্রুপের। কিন্তু ইলিয়াসকে ভালোভাবেই চেনেন। আমাকে জানান- পরে ফোন দিয়ে ইলিয়াসের খোঁজ দেবেন।

দশ মিনিটের ভেতরই তিনি ফোন দেন আবার। এবার ইলিয়াসের নাম্বারসহ। শুধু ইলিয়াস নয়- আব্দুর রশিদ নামে দাসপার্টির আরেক যোদ্ধার নাম্বারও পেয়ে যাই যিনি আবার জ্যোতির ছোটবেলার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।

আপাত আমার প্রধান গন্তব্য ইলিয়াস। নাম্বার পেয়েই তাকে ফোন দেই। ভরাট কন্ঠের ইলিয়াস নিজের পরিচয় দেন। তিনি এখনো আনসার ভিডিপিতেই আছেন। অবসর নিতে আরো একবছর বাকী, হবিগঞ্জ শহরে থাকেন।

আমি ছোট্ট করে আমার উদ্দেশ্য বলি। বুঝিয়ে বলি তার সাথে দেখা হওয়া কেনো এতো জরুরী। শুধু দেখা না, আমি তার কাছে সময় চাই- তাকে নিয়ে যেতে চাই জলসূখা গ্রামে যেখানে জগতজ্যোতির জন্ম ও বেড়ে উঠা, খৈয়াগোপির বিলে যেখানে শেষ যুদ্ধ হয়েছিলো তাদের, পাহাড়পুর- কয়েকশো লুটেরাকে যেখানে তারা প্রতিহত করেছিলেন এবং আরো যদি কোন জায়গা থাকে তাদের যুদ্ধের স্মৃতিবাহী। এ ছাড়া ও যেতে চাই মাকালকান্দি নামের বানিয়াচংয়ের একটা গ্রামে যেখানে একদিনে ৭৯ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়াও যদি সময় করতে পারি সাড়ে চারশো বছরের পুরনো বৈষ্ণব সাধকদের আখড়া বিথঙ্গল ও যেতে চাই।

মাঝে আরো দু-একবার ফোনে কথা বলে আমরা তারিখ ঠিক করি ১৮ জুন। আমি যাবো সিলেট থেকে, ঢাকা থেকে আসবে নজরুল ইসলাম এবং অনিন্দ্য রহমান। এবার আমাদের সাথে ভালো ক্যামেরা থাকবে, পুরো ট্যুর ভিডিওফিকেশন হবে। প্রথম দিন হবিগঞ্জ শহরে ইলিয়াসের সাথে আলাপচারিতা, পরের দুইদিন তাকে নিয়ে পরিকল্পনামতো ঘুরাঘুরি। কিন্তু শেষ মুহুর্তে অনিন্দ্য অন্য কাজে আটকে গেলে তার বদলে তানিম নামে এক তরুণ যোগ দেয়ার পরিকল্পনা, তানিম সিনেমা বানান।

নজরুল ও তানিম সকাল সাড়ে আটটার বাসে ঢাকা থেকে, আমি পৌঁনে এগারোটার বাসে সিলেট থেকে। সাড়ে বারোটায় শায়েস্তাগঞ্জে আমাদের দেখা হবার কথা। আমি সময়মতো পৌঁছে গেলেও নজরুলদের ঘন্টাখানেক দেরি হয়। ঝকঝকে উজ্জ্বল রোদেলা দিন। ওরা আসার পর শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সিএনজি নিয়ে আড়াইটার মধ্যে আমরা পৌঁছে যাই হবিগঞ্জ শহরে। শহরের ভেতরে এখনো পুরনো দিনের ছিমছাম ভাবের কিছু ছোঁয়া রয়ে গেছে। আমিরচাঁন কমপ্লেক্স নামে একটা আধুনিক বিপণিবিতানের উপরে বেশ ভালো একটা হোটেলে আমরা রুম নিই। টিভিতে তখন বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে সিরিজের প্রথম খেলা শুরু হয়ে গেছে। খেলায় চোখ রাখতে রাখতে দ্রুত গোসল করে নিয়ে ইলিয়াসকে ফোন দেই, কথা ছিলো তাই।

ইলিয়াস জানালেন সকালবেলা একটা জরুরি কাজে তাকে আজমিরীগঞ্জ যেতে হয়েছে, আমরা পৌঁছানোর আগেই তার ফিরে আসার কথা ছিলো কিন্তু এখনো ফিরতে পারেননি। আমরা তার অপেক্ষা করতে পারি অথবা আজমিরীগঞ্জ চলে যেতে পারি- সেখানে তার সাথে দেখা হবে।

নজরুল ও তানিমের সাথে আলাপ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিই- আমরা বরং এগিয়ে যাবো। হোটেল রুম ছেড়ে দিয়ে টপফ্লোরের রেস্টুরেন্টে তাড়াহুড়ো করে কিছু খেয়ে নিয়ে আসি খোয়াই ব্রীজ পেরিয়ে সিএঞ্জি স্টেশনে। এখান থেকে সিএনজি ভাড়া করে বানিয়াচং আদর্শবাজারের ঘাটে। হবিগঞ্জ শহর পেরুনোর পরই দৃশ্যপট বদলাতে থাকে। দুপাশে হাওড় ও বিল। ঝকঝকে আকাশে সাদামেঘ, হাওড়ের পানিতে সেই মেঘের ছায়া। রাস্তাটা কোথাও ভালো, কোথাও ভাঙ্গা, দু’পাশে প্রচুর গাছ। একবার সিএনজি থামিয়ে ছবি তুলি। বানিয়াচং আদর্শবাজার যখন পৌঁছাই বিকেল সাড়ে পাঁচটা প্রায়।

হাতে সময় থাকলে বানিয়াচং ঘুরা যেতো। এটি নাকি বিশ্বের সর্ববৃহৎ গ্রাম। একটা গ্রাম নিয়েই চারটি ইউনিয়ন এবং একটি উপজেলা। প্রাচীন লাউড়ের রাজধানী উত্তরের তাহিরপুরের লাউড়েরগড় থেকে এখানে স্থানান্তরিত হয়েছিলো মোঘল আমলে। সেই আমলের বানানো মসজিদ, কমলা রানীর দীঘি, রাজবাড়ি এসব দেখতে পর্যটকরা আসেন বানিয়াচং। কিন্তু আপাত আমাদের সময় নেই। রাত নামার আগে আজমিরীগঞ্জ পৌঁছাতে হবে। নজরুল ও তানিম ঢাকার মানুষ, যদি ও আমি সিলেটী কিন্তু এই এলাকায় আগে আসা হয়নি।

নয়শো টাকায় ট্রলার রিজার্ভ করি আমরা। বুঝি এটা অনেক বেশি কিন্তু কিচ্ছু করার নেই সেই মুহুর্তে, আর কেউ যাবেনা।

যাত্রা শুরু হয় আমাদের আজমিরীগঞ্জের উদ্দেশ্যে। ড্রাইভার জানালেন দু’ঘন্টা লাগবে। আমরা ট্রলারের উপরে উঠে বসি। প্রথমে ছোট নদী তারপর আদিগন্ত হাওর। খোলা বাতাসে ঘুম আসতে চায়। বিকেল যতো ফুরাতে থাকে আদিগন্ত হাওরে ততোই অস্তমান সূর্যের আলো রঙ ছড়ায়। রঙধনুও দেখি। এতো আলো, এতো বর্ণচ্ছটা- অভূতপূর্ব। ছোট ছোট নৌকায় মানুষেরা ঘরে ফিরছে, ফিরছে হাঁসের পাল। প্রায় অন্ধকারে হাওরের মাঝখানে একটা ঈদগাঁ দেখি। ট্রলারের মাঝিকে জিজ্ঞেস করি- কোন গ্রাম? জবাব দেয়- জলসূখা।

আহ জলসূখা! জগতজ্যোতির গ্রাম। এই গ্রামে আমাদেরকে আসতে হবে। জলসূখা পেরিয়ে সম্ভবতঃ আরো আধা ঘন্টার মতো। আজমিরীগঞ্জের নগরঘাটে যখন আমরা ট্রলার থেকে তখন অন্ধকার হয়ে গেছে, তেমন কিছু আর দৃশ্যমান নয়। কিন্তু আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা হতবাক হয়ে পড়ি। আকাশের রঙ কালো নয়, ঘন নীল। সেই ঘননীল উদার আকাশে এক দুই হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ তারা উঠেছে। চাঁদ এতো কাছে, আরো কাছে সন্ধ্যাতারা। এমন দৃশ্য এক জীবনে খুব বেশি দেখার নয়।

আমরা এই দৃশ্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকি দীর্ঘক্ষণ। আমার মোবাইলে ফোন আসে অচেনা নাম্বার থেকে। ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াসের ভাতিজা’ পরিচয় দিয়ে একজন বলেন- এইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে, গাড়ী নিয়ে তিনি আসছেন আমাদের নিতে। আমরা দাঁড়িয়ে থাকি সেই তারাজ্বলা সন্ধ্যার অসামান্য বিস্ময়ে। এর মধ্যে দু’চার জন কৌতুহলী এসে বৃত্তান্ত জিজ্ঞেস করেন, আমরা এড়িয়ে যাই। আরো পরে, অন্ধকার আরো ঘনালে, আকাশে লক্ষ লক্ষ তারার সাথে আরো অসংখ্য তারা জ্বলে উঠার পর- এক তরুণ এসে আমাদেরকে তার পরিচয় দেন- ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াসের ভাতিজা আমি’।

ব্যাটারীচালিত টমটমে করে এবার আমরা যাত্রা শুরু করি কাকেলছেও গ্রামে। অসংখ্য তারাজ্বলা আকশের নীচ দিয়ে আমাদের টমটম এগোতে থাকে ঘন অন্ধকারে। রাস্তা কাঁচা। একবার আমাদেরকে নামতে হয়, আটকে গেছে কাঁদায়। ধাক্কা দিয়ে টমটমকে তুলে আমরা পায়ে হেঁটে এগুতে থাকি। এমন বিশাল খোলা আকাশ, অজস্র জ্বলন্ত নক্ষত্ররাজির অতুলনীয় প্যানারোমা আমাদের নাগরিক অভিজ্ঞতার অধিক। একসময় বুঝতে পারি কাকেলছেও বাজারের ভেতর দিয়ে চলছে টমটম। কিছুক্ষণ পর আমাদের থামতে হয়।

জিজ্ঞেস করে জানতে পারি – পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ থাকলে ও বিকেল থেকে বিদ্যুৎ নেই, কখন আসবে কেউ জানেনা। ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়ে অন্ধকারের আমরা আমাদের গাইডকে ফলো করি, এই বাড়ির সামনে দিয়ে ঐ বাড়ির পিছন দিয়ে একটা পাকা দালানের ভেতর আমরা প্রবেশ করি। মোমের আলো জ্বলছে একটা ঘরে। মেঝেতে শুয়ে ছিলেন কেউ, আমাদের প্রবেশের সাথে সাথে উঠে দাড়ান- গায়ে সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি, দীর্ঘাকৃতির নয় কিন্তু পেটানো শরীর। ভালো করে তখনো তার মুখ দেখতে পাইনা। হাত বাড়িয়ে দেন ‘ আমি ইলিয়াস’!

এই বাড়িটা ইলিয়াসের নয়। পাকা বাড়ি, টাইলসের মেঝে, আলাদা বাথরুম এবং মোটরের পানি- যদিও বিদ্যুৎ অনুপস্থিত কয়েকঘন্টা ধরে। তার বাড়ি এই গ্রামেরই অন্য পাড়ায়। এই বাড়ি তার এক আত্মীয়ের। ধারণা করি তার নিজের বাড়ির চেয়ে এই বাড়িটা উন্নত বলেই আমাদেরকে এখানে রাখার বন্দোবস্ত হয়েছে। বাড়িওয়ালা ভদ্রলোকের সাথে ও দেখা হয়। আমাদেরই সমবয়সী হবেন, মাথায় টুপি ও মুখে দাড়িতে অবশ্য তাকে বয়স্ক লাগে। গল্প করেন- ৯০’র এরশাদ পতনের পর তার আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে আজমিরীগঞ্জ বাজারে মিছিল হয়েছিলো, তিনি তখন স্কুলে পড়েন। পেশায় স্বর্ণকার, স্থানীয় বাজারে নিজের সোনার দোকান আছে। কয়েক ভাই বাহরাইনে থাকেন- একই পেশায়। ’৯৬-এ শেখ হাসিনা এখানে এলে নিজে ডিজাইন করে একভরি ওজনের সোনার নৌকা উপহার দিয়েছিলেন।

আমরা শরবত খেতে খেতে তার গল্প শুনতে থাকি। স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুল হক ভুঁইয়ার সাথে তার সম্পর্ক সুবিধার না। প্রায়ই বিভিন্ন মামলার ঝামেলায় তাকে পড়তে হয়। ইলিয়াস ও জানান তাকে ২৮ টি মামলা লড়তে হয়েছে এই চেয়ারম্যানের সাথে। চেয়ারম্যান ভুঁইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং তার ছোটভাই মিজবাহ উদ্দীন ভুইঁয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

আলো আসার কোন সম্ভাবনা নেই, আমরা তিনজনই গোসল করে সারাদিনের ভ্রমণজনিত ক্লান্তি কাটানোর চেষ্টা করি। ভ্যাপসা গরম লাগে তবু। আমরা সিঁড়ি দিয়ে বাড়ির উপর ছাদে গিয়ে বসি। আমরা তিনজন এবং ইলিয়াস- এবং আরো কয়েকজন নানা বয়সের। মাথার উপর চূর্ণ হীরের উৎসব, হালকা মৃদু বাতাস।

কথা শুরু করি তার সাথে।
-‘ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে কী করতেন, কেন এবং কীভাবে যুদ্ধে গেলেন? ‘
ছিলেন স্থানীয় স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তিনি এবং তার চাচাতো ভাই বদিউজ্জামান। স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি ছিলো, ইউনিয়ন পর্যায়েও সংগঠন ছিলো। দু’ভাই সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ’৭০-এর নির্বাচনে দুজনেই খুব খেটেছেন- স্মৃতিচারণ করেন ইলিয়াস। বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল হক ভুঁইয়া তখনো চেয়ারম্যান ছিলেন। বদিউজ্জামানের গলা থেকে নৌকা প্রতীক টান মেরে ছিড়ে ফেলেছিলেন। আওয়ামী লীগের বিরোধী ছিলেন তখন, এখন প্রধান পৃষ্ঠপোষক।

আগের সকল পর্বের লিংক-  

[প্রথম পর্ব]  [দ্বিতীয় পর্ব]  [তৃতীয় পর্ব] [চতুর্থ পর্ব] [পঞ্চম পর্ব]
  [ষষ্ঠ পর্ব]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত