সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ২৩:২২

সামরিক অভিধান থেকে মার্শাল ল বাদ দেওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মার্শাল ল (সামরিক আইন) রক্তপাত ছাড়া দেশ ও সশস্ত্র বাহিনীর কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। তাই 'সামরিক অভিধান' থেকে মার্শাল ল শব্দটি বাদ দেওয়া উচিত।' প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সততা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বকে অগ্রাধিকার দিয়ে ন্যায়নীতির ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনীতে পদোন্নতি দেওয়ার জন্যও সংশ্নিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সোমবার সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদ-২০২০ এর (প্রথম পর্ব) সভায় বক্তব্যে এ আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভাষণ দেন তিনি। খবর বাসস, ইউএনবির।

জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলের ১৯টি ক্যুর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সময়ে বহু সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিককে হত্যা করা হয়। তার আমলে সশস্ত্র বাহিনীর এত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা ও সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছে যে, যুদ্ধেও এত সৈন্য নিহত হয়নি। আমরা (সশস্ত্র বাহিনীতে) আর কোনো ছেলেহারা পিতা বা পিতাহারা ছেলের কান্না শুনতে চাই না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর একের পর এক ক্যুর কারণে সশস্ত্রবাহিনী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সব ক্যুর নামে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সশস্ত্র বাহিনীর অনেক সদস্যকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, 'সেনা ও বিমানবাহিনীতে সবচেয়ে বেশি রক্তপাত হয় এবং আমাদের বহু স্বামীহারা বিধবা ও পুত্রহারা বাবা-মায়ের কান্না শুনতে হয়েছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আমাদের পরিবারের সম্মানিত সদস্য। তারা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এই বাহিনীকে আরও আধুনিক ও সময়োপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।'

সশস্ত্র বাহিনী পর্ষদের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা সকল জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা একত্রিত হয়েছেন। আপনাদের প্রজ্ঞা, বিচারবুদ্ধি, ন্যায়পরায়ণতার ওপর আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। আমি এটুকু অনুরোধ করব- এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে উপযুক্ত কর্মকর্তারা যাতে প্রমোশন পান। আপনারা ন্যায়নীতির ভিত্তিতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এই প্রমোশন দেবেন, যাতে সকলের ভেতরে একটি আস্থা আসে। আমি জানি অনেক উপযুক্ত কর্মকর্তা থাকেন, সবাইকে দেওয়া যায় না। কারণ পদটা সীমিত। তার পরও আপনারা অবশ্যই দেখবেন যারা সত্যিকারে উপযুক্ত তারা যেন প্রমোশন পান।'

সশস্ত্র বাহিনীতে পদোন্নতিতে ব্যবহৃত আধুনিক পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'বর্তমানে সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য আধুনিক পদ্ধতি অর্থাৎ ট্রেস ট্যাবুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কমপারেটিভ ইভ্যালুয়েশনের মাধ্যমে তুলনামূলক মূল্যায়ন করে আপনারা সিদ্ধান্ত নিন। এর সাথে সাথে এটুকু দেখতে হবে শুধু খাতা-কলমে বেশি নম্বর পাওয়া নয়, যারা মাঠে ভালো কাজ করতে পারেন, কমান্ড করতে পারেন, নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে কিনা- সেগুলোও আপনাদের বিচারে আনতে হবে।'

সশস্ত্র বাহিনীতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসের বিষয়টি বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই দেশ স্বাধীন হয়েছে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিতে পারি না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে যারা বিশ্বাসী, যারা বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী- নিশ্চয়ই তাদের আদর্শ নিয়েই চলতে হবে। দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী তারাই যেন দায়িত্ব পান, যাতে তারা সঠিক পথে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'যেসব অফিসার সামরিক জীবনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যোগ্য নেতৃত্ব প্রদানে সফল হয়েছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের আপনারা অবশ্যই বিবেচনা করবেন। সেটি আমি চাই। আর যে কোনো কর্মকর্তার পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের পেশাগত মান, তাদের যোগ্যতা ও তাদের দক্ষতাকে আপনারা অগ্রাধিকার দেবেন।'

দক্ষতার সঙ্গে শৃঙ্খলা-সততা-বিশ্বস্ততার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'এটা একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী, এই বাহিনীতে যারা পদোন্নতি পাবেন, তারা যেন সব সময় একটি শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলতে পারেন। কারণ শৃঙ্খলাই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। কাজেই শৃঙ্খলা সম্পর্কে যারা যথেষ্ট সচেতন, অনুগত; যারা তাদের ওপরে থাকবেন, তাদের প্রতি তারা অনুগত থাকবেন আবার অধস্তনদের ব্যাপারে দায়িত্ববান হবেন- এই বিষয়টাও দেখতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, 'আপনারা বোর্ডে বসে উপযুক্তদের নিয়ে আসবেন, যাতে আগামী দিনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আরও সুদক্ষ হয়। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয় এবং আমরা যেন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে সব সময় গর্ববোধ করতে পারি।' বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে অত্যাধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, 'সব দিকে নজর রেখে আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে ঢেলে সাজিয়েছি এবং সেই ধরনের ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। সেইসঙ্গে বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছি যাতে সব ধরনের ট্রেনিং সকলে পান।'

সরকার প্রধান বলেন, 'আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন একটি সশস্ত্র বাহিনী আমরা গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা এই দেশটাকে উন্নত-সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা নীতিমালাও নিয়েছি।'

এ সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জে. মাহফুজুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। চিফ অব নেভাল স্টাফ অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল নৌবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে এবং চিফ অব এয়ার স্টাফ এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত বিমানবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সূত্র: সমকাল

আপনার মন্তব্য

আলোচিত