নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ২০:৩৫

অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা স্বাধীনতার জন্যে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করেছেন

অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা স্বাধীনতার জন্যে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের বক্তারা। দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান শহীদ, বাংলাদেশের কৃতিসন্তান অগ্নিযুগের বিপ্লবী বাঘা যতীনের ১০৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) এক ওয়েবিনারের বক্তারা বাঘা যতীনের সংগ্রামী জীবনের ওপর আলোচনা করেন।

‘ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক নির্মূল কমিটির এই ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি লেখক, সাংবাদিক ও প্রামাণ্য চিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার কবির।

বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৭৯-১৯১৫), যিনি বাঘা যতীন নামে খ্যাত কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর কয়া গ্রামে তার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনেই তিনি অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং দেশমাতৃকার মুক্তির শপথ গ্রহণ করেন। ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তিনি ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে উড়িষ্যার বালাশোরে শহীদ হন। বিপ্লবী বাঘা যতীনের জীবনের মূলমন্ত্র ছিল ‘আমরা মরব, দেশ জাগবে’। মাতৃভূমির মুক্তির জন্য তার মহান আত্মত্যাগ যুগে যুগে স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করেছে বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের তরুণ সমাজকে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তরুণদের এই আত্মদান অনিবার্য করেছে নৃশংস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় বিজয়ে।

প্রবল পরাক্রমশালী পাকিস্তানি নৃশংস বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন করাও ছিল বিশ্বের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের এক অতুলনীয় ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর স্বাধীন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, বাঘা যতীন, সূর্যসেনরা স্বাধীনতার যে সংগ্রাম আরম্ভ করেছিলেন, আমরা তা সম্পন্ন করেছি। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন অহিংস অসহযোগ আন্দোলন এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সশস্ত্র সংগ্রামের ধারার সমন্বয় করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১-এর মার্চের ১ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সাফল্যের যেমন কোনও দ্বিতীয় নজির নেই- সভাপতির ভাষণে শাহরিয়ার কবির বলেন, ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান দুই ধারা।

আলোচনায় অংশ নেন শহীদ বাঘা যতীনের পৌত্র ইন্দুজ্যোতি মুখোপাধ্যায় (পশ্চিমবঙ্গ), বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, গবেষক অরিন্দম মুখোপাধ্যায় (মহাসচিব, ইন্সটিটিউট অব সোশাল অ্যান্ড কালচারাল হিস্ট্রি, ভারত), নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল এবং সংগঠনের আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শাখার নেতৃবৃন্দ।

সভায় বক্তারা বলেন, অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের ব্রিটিশরা এমনকি অনেক গান্ধীবাদী ঐতিহাসিক সন্ত্রাসী বলেছেন। অথচ তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মাতৃভূমি স্বাধীনতার জন্য তরুণদের অকাতরে জীবনদানে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বাঘা যতীনদের দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা বিরোধী, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করার সংগ্রামে তরুণ সমাজকে আলোকিত করার আহ্বান জানান বক্তারা।

এদিকে, আজ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া গ্রামে শহীদ বিপ্লবী বাঘা যতীনের জন্মভিটায় কয়া মহাবিদ্যালয়ে নির্মূল কমিটির কয়া শাখা ও বাঘা যতীন থিয়েটার যৌথভাবে শহীদ বিপ্লবী বাঘা যতীনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভার আয়োজন করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত