সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ অক্টোবর, ২০২০ ০০:৩৩

শিশুকে চোরাচালান মামলার আসামি করায় ক্ষমা চাইলেন বিজিবি কর্মকর্তা

সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান। (ফাইল ছবি)

শিশুরা যেন মাদক পাচার বা চোরাচালানের মত অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সীমান্ত এলাকার স্কুলগুলোতে প্রেরণামূলক কার্যক্রম (মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম) গ্রহণ করতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।

সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান, ভারত থেকে অবৈধভাবে মহিষ আনা, বিজিবির কাজে বাধা ও রাজস্ব ফাঁকির মামলায় এক শিশুকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে আসামি করার ঘটনায় ওই শিশু ও বিজিবি কর্মকর্তার বক্তব্য শুনে আদালত এ আদেশ দিয়েছে।

আদালতে সেই শিশুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ছিলেন মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলও আদালতে তার মতামত তুলে ধরেন।

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ওই শিশুটির বয়স ১৯ বছর দেখিয়ে মামলা করার ঘটনায় গত ২০ সেপ্টেম্বর বিজিবির সুবেদার নায়েব মো. সাহাব উদ্দিনকে তলব করেছিল হাই কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদককে সেদিন বলা হয়েছিল, শিশুটিকেও যেন আদালতে নিয়ে আসা হয়।

সে অনুযায়ী বুধবার সকালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আদালতে আসে শিশুটি। বিজিবির নায়েব সুবেদার মো. সাহাব উদ্দিনও আদালতে হাজির হন।

শিশুটিকে মামলায় জড়ানোর জন্য লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষামা চান সাহাব উদ্দিন। বয়স বাড়িয়ে দেখানোর জন্য আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

তার আবেদন আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। শুনানি শেষে আদালত তাকে অব্যাহতি দেন।

বিজ্ঞাপন


এরপর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল আদালতে বলেন, “যে মামলা হয়েছে আমরা সে মামলার বিষয়বস্তুতে যেতে চাই না। এখানে আমাদের আলোচ্য বিষয় শিশুটির বয়স।

“এই শিশুকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার বয়স কত। কিন্তু মামলা দেওয়া হয়েছে ১৯ বছর দেখিয়ে। আমরা এমনও তো দেখি শিশু অপরাধ করে। সেক্ষেত্রে শিশু আইনে শিশু আদালতে তার বিচার হবে। কিন্ত তাকে কেন বয়স বাড়িয়ে ফৌজদারি আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হবে?”

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পি তখন বলেন, “ভিডিওতে ওই শিশুকে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা গেছে।”

বিচারক তখন প্রশ্ন করেন, ভিডিওতে তাকে দেখে কি বয়স্ক মনে হয়েছে? এরপর আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তি করে আদেশ দেয়।

আদেশে বলা হয়, শিশুটিকে এ মামলায় আর হাজিরা দিতে হবে না। তবে মামলা যেহেতু হয়েছে, নিয়ম মত তার তদন্ত হবে।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক আদেশে বলেন, “বিজিবির পক্ষ থেকে যেহেতু বলা হয়েছে যে, সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচার ও চোরাচালানে শিশুদের ব্যবহার করা হয়, তাই বিজিবিকে বলছি, সীমান্ত এলাকার শিশুরা যেন এ ধরনের অপরাধে জাড়িয়ে না পড়ে, তাদের যাতে ব্যবহার করা না হয়, সেজন্য সীমান্ত এলাকার স্কুলগুলোতে তারা প্রেরণামূলক (মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম) কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।”

পরে আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, মহিষ চুরি ও বিজিবির কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে যে মামলাটি হয়েছে, সেখানে ৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে ওই শিশুকে। আগাম জামিনের জন্য এলে আদালত শিশুটিকে দেখে মামলার বাদীকে তলব করেছিল।
“আজ মামলার বাদী হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আদালত তাকে ক্ষমা করেছেন। আদালত এ মামলায় শিশুকে নিয়মিত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।”

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, সিলেটের জৈন্তাপুরের খিলাতৈল এলাকার ব্যবসায়ী সাইদুল বেপারী ২০টি মহিষ কিনে বাড়ি আনেন। কিন্তু বিজিবি সদস্যরা গত ১৩ সেপ্টেম্বর ওই মহিষগুলো আটক করে নিয়ে যায়। এরপর বিজিবির নায়েব সুবেদার সাহাব উদ্দিন জৈন্তাপুর থানায় মামলা করেন।

মামলায় ওই শিশু, তার বাবা, ভাই, বোন, ভাবীসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ৮/১০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলায় বলা হয়, আসামিরা ১৫টি মহিষ ছিনিয়ে নেয় এবং বিজিবির কাজে বাধা দেয়।

এ অবস্থায় শিশুটিসহ ১০ জন হাই কোর্টে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করে। আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত