সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ নভেম্বর, ২০২০ ০১:৪১

চুয়াডাঙ্গায় ব্যাংক লুটেরাদের মাথায় ছিল হেলমেট, পরনে পিপিই

চুয়াডাঙ্গার সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা কার্যালয়ে ফিল্মি স্টাইলে দিনে-দুপুরে ৯ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। লুটের পর অস্ত্র উঁচিয়ে প্রথমে ব্যাংকের ভেতরে জিম্মি করা গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের ও পরে ধাওয়াকারী জনতাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পালিয়ে গেছে লুটেরারা।

রবিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে জীবননগর উপজেলার উথলী বাজার সোনালী ব্যাংক শাখায় এ ঘটনা ঘটে। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত এই ঘটনায় এখনও ধরা পড়েনি কেউ। তবে এ ঘটনার পর জানা যায়, ব্যাংকটিতে ছিল না কোনো সিসি ক্যামেরা। যার কারণে পরিকল্পিতভাবে এরই সুযোগ নিয়েছে লুটেরারা।

জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের উথলী শাখার সিকিউরিটি গার্ড জাকির হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, সাদা পিপিই ও মাথায় হেলমেট পরিহিত ৩ জন লোক এসেছিল পরপর। আমি বললাম ‘হেলমেটটা একটু খোলেন’। কিন্তু, হেলমেট না খুলে পরপর ৩ জনই ভেতরে ঢুকে পড়ে আর আমার মাথায় পিস্তল ও ঘাড়ে ধারালো চাকু ধরে বলতে থাকে ‘কথা বললেই শেষ করে দেবো- কোনও কথা হবে না’। এরপর ঢুকে ব্যাংকে উপস্থিত সবাইকে বলে ‘যত ফোন আছে সব সামনে ফেলে দে’। এরপর সবাইকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে এক জায়গায় করে ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার এবং ড্রয়ারে থাকা টাকা ও পরে ভল্টের চাবি নিয়ে ভল্টে থাকা টাকা নিয়ে নেয়। তারা সারাক্ষণ বলতে থাকে ‘কেউ কোনও শব্দ করবি না, করলেই গুলি করে দেবো’। এরপর তারা ব্যাংক থেকে বের হয়ে যায়।

শাখাটির ব্যবস্থাপক আবু বক্কর সিদ্দিকী জানান, সোয়া ১টার দিকে হেলমেট ও সাদা পিপিই পরে তিন জন ব্যাংকে প্রবেশ করে। এরপর তারা পিস্তল উঁচিয়ে ব্যাংকের দরজা বন্ধ করে দেয়। তারা ব্যাংকের সবার মোবাইল নিয়ে নেয় এবং একটি কক্ষে সবাইকে জিম্মি করে। পরে তারা ব্যাংকের কাউন্টার থেকে ৯ লাখ টাকা লুটে নেয়। এরপর মোটরসাইকেলে করে তারা পালানোর সময় টাকা তুলতে আসা এক গ্রাহক চিৎকার শুরু করলে বাজারে থাকা লোকজন তাদের ধাওয়া করে। কিন্তু তারা পিস্তল উঁচিয়ে লোকজনকে গুলি করার হুমকি দেয়। লোকজন তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেও তাদের আটকাতে পারেনি।

উথলী বাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ব্যাংক ডাকাতির খবর শুনে আমি দোকান থেকে লোহার রড হাতে নিয়ে বের হই এবং তাদেরকে বাধা দিতে যাই। এসময় তাদের মধ্য থেকে একজন বন্দুক বের করে আমাকে গুলি করতে যায় এবং বলে ‘বেশি বাড়াবাড়ি করিস না, লাশ ফেলে দেবো’। আমি আর সামনে যেতে পারিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী রাসেল হোসেন জানান, ব্যাংকের টাকা লুট করে তিনজন ব্যক্তি মাথায় হেলমেট পরা অবস্থায় মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের পেছনে আমরা ধাওয়া করি। কিন্তু তারা তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আমাদেরকে গুলি করার হুমকি দিলে আমরা ভয়ে আর এগুতে পারিনি।

মোটরসাইকেলটির নম্বর প্লেট কেউ দেখেছেন কিনা জানতে চাইলে, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, উত্তেজনার কারণে তারা কেউ তা খেয়াল করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ডাকাতরা জীবননগর উপজেলার ডুমুরিয়া নামক স্থানের রাস্তা দিয়ে আন্দুলবাড়িয়ার দিকে চলে যায়।

এ ঘটনার পর থেকে উথলীবাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে অপরাধীদের আটকের বিষয়ে জীবননগর থানা-পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে বলে থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাংকে ডাকাতি ঘটনার কথা জানার পর থেকেই পুলিশের সবগুলো ইউনিটকে কাজে লাগানো হচ্ছে। সব কয়টি রাস্তার মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তবে ব্যাংকটিতে কোনও সিসিটিভি ছিল না। থাকলে আমাদের কাজ আরও সহজ হতো।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানান, এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে এ ঘটনাটা অনেকটা ভাবিয়ে তোলার মতোই বিষয়। তবে ব্যাংকে সিসিটিভি না থাকাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দোষীদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। আশা করা যাচ্ছে অতি শীঘ্রই তাদের আটক করতে সক্ষম হবো।

উল্লেখ্য, রবিবার দুপুরে সাদা পিপিই ও মাথায় হেলমেট পরিহিত ৩ জন লুটেরা ব্যাংকে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে ব্যাংকে ক্যাশ কাউন্টার ও ভল্টে থাকা প্রায় ৯ লাখ টাকা লুট করে অস্ত্র উঁচিয়ে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত