সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ জানুয়ারি, ২০২১ ২১:৪৪

এক বছরের বেতন বকেয়া থাকলে পৌরসভা বাতিল

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১২ মাসের বেতন দিতে ব্যর্থ হওয়া পৌরসভাগুলোর পরিষদ বাতিল করার প্রস্তাব রেখেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বলেছেন, প্রয়োজনে এর জন্য আইন পরিবর্তন করা হবে।

রোববার ঢাকার একটি হোটেলে ‘স্ট্রেংদেনিং দ্য আরবান লোকাল গভর্নমেন্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতীয় পর্যায়ের এক নীতি-নির্ধারণী বিষয়ক আলোচনা সভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

মূলত ‘স্ট্রেংদেনিং দ্য আরবান লোকাল গভর্নমেন্টস ইন বাংলাদেশ’ এ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে নেয়া একটা প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় গবেষণা চালিয়ে এই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন সে অনুসারে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে ব্রিটেনের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস এবং ইউএনডিপি, বাংলাদেশ।

সভার শুরুতে বক্তারা টেকসই উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার তাগিদ দেন। একই সঙ্গে কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাদ্ধতার বিষয়টি সামনে আনেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অনেক পৌরসভা তার কর্মচারীদের ১২ মাসের বেতন দিতে পারে না। তার মানে সেসব এলাকার মানুষের কর দেয়ার সক্ষমতা নেই। আমি এটা বিশ্বাস করি না।’

তিনি বলেন, ‘পৌরসভাগুলোকে অবশ্যই তার নিজের আয়ে চলতে হবে। আইনেও সেভাবে বলা আছে। কীভাবে আয় বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা, সেই সক্ষমতা তাদের অর্জন করতে হবে।

‘তাই আমি বিষয়টা রিফর্ম করার প্রস্তাব করছি। যারা (পৌরসভা) নাকি ১২ মাসের বেশি বেতন দিতে পারবে না তাদের পরিষদ ভেঙে দেয়া হবে।’

মন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল এবং মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পৌরসভাগুলোকে অনেক অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তার ভাষ্য, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য কেবল সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের শক্তিশালী করলেই হবে না, তাদের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের জন্য বিশেষ করে নগর পর্যায়ের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।

ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসনের পর্যবেক্ষণ, ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো থেমে থাকার কারণ যে অর্থনীতি এটা সবারই জানা। কিন্তু তাদের আয় বাড়ানোর জন্য সরকারের পর্যায় থেকে যে ধরনের পলিসি তৈরি করা দরকার, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’

সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী করপোরেশনের কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিদ্যমান জনবল কাঠামোকেও একটা অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেন।

তিনি বলেন, ‘আবার চাইলেও আমরা অনেক কিছু করতে পারি না। কারণ, আমাদের নিজস্ব জায়গা খুব কম। খাস জমি অনেক ক্ষেত্রে মিল-কারখানাকে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু শিশু পার্কের জন্য আমাদের জায়গা দখল করে নিতে হয়।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও আইভীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

সিসিক মেয়র তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান চাহিদার কারণে গ্রাম থেকে নগরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকলে নগরের জনসংখ্যা গ্রামের চেয়ে কয়েকগুন বেড়ে যাবে। ফলে, নগরে বাসস্থানের সংকট নিরসনে বস্তিবাসির সংখ্যা বাড়বে। সংকটে পড়বে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত। কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দেবে।

তিনি বলেন, জনসংখ্যার চাপে নাগরিক সেবার মান নিয়ন্ত্রনে রাখা চেলেঞ্জ হয়ে পড়বে। তাই নগর কতৃপক্ষের দক্ষতা ও সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। এজন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএনডিপি, বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী নগরের টেকসই উন্নয়নের জন্য বস্তিবাসীসহ প্রান্তির জনগোষ্ঠীর দিকে বিশেষ নিজর দেয়ার পরামর্শ দেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত