সিলেটটুডে ডেস্ক:

০৮ মে, ২০২১ ১৮:৩০

পরিযায়ী পাখি রক্ষায় সকলের সহযোগিতা চান পরিবেশমন্ত্রী

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো.শাহাব উদ্দিন এমপি বলেছেন, ‘প্রতি বছর শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া এবং ইউরোপ থেকে বাঁচার তাগিদে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসে আমাদের প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করছে। এসকল পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে পাখি নিধন কমেছে।’

শনিবার (৮ মে) বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস-২০২১ উপলক্ষে ‘পাখির মত গান গাই, উড়ে যাই সুউচ্চ দিগন্তে’ এই প্রতিপাদ্যে বন অধিদফতর আয়োজিত অনলাইন আলোচনা সভায় সরকারি বাসভবন হতে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী এসময় প্রতিবেশ রক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালন করা পাখিদের আবাসস্থল রক্ষায় দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘পাখি নিধন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে সকলের সহযোগিতা চাই।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, সচিব জিয়াউল হাসান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক এবং বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন ফেডারেশন’র সভাপতি ড. এস এম ইকবাল।

পাখি সংরক্ষণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের উল্লেখ করে পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে আবাসিক ও পরিযায়ী পাখিসহ প্রায় ৭১০ প্রজাতির পাখির মধ্যে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসীলে ৬৫০ প্রজাতির পাখি রক্ষিত প্রাণী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিযায়ী পাখি শিকার/হত্যার জন্য সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ (এক) লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সোনাদিয়া, নিঝুম দ্বীপ, টাংগুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর এবং গাঙগুইরার চর ইস্ট এশিয়ান অস্ট্রেলেশিয়ান ফ্লাইওয়ে সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘পরিযায়ী জলচর পাখির পরিযায়ন পথ বিষয়ক গবেষণার উদ্দেশ্যে পাখি শুমারি ও পাখির গায়ে রিং পরানো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিপিএস স্যাটেলাইট ট্যাগিং করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে পরিযায়ী পাখির পরিযায়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে।’

পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ‘পাখিসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সরকার পুরস্কার প্রণোদনা প্রদান করে থাকে। ‘মহাবিপন্ন’ প্রাণী শকুনের জন্য মরণঘাতী ওষুধ ডাইক্লোফেনাক উৎপাদন ও বিক্রি সারাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সুন্দরবন ও সিলেটে দুটি ভালচার সেভ জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় শকুন রক্ষায় ক্ষতিকর ‘কিটোপ্রোফেন’ ওষুধের উৎপাদন বন্ধের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের সহযোগিতা নিয়ে বর্তমান সরকার পাখিসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সফল হবে।’

এদিকে আলোচনা সভায় উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, ‘পরিযায়ী পাখিকে আমরা সংরক্ষণ করতে হবে। নইলে প্রকৃতিকে রক্ষা করা যাবে না। প্রকৃতি রক্ষায় আমাদের পরিযায়ী পাখিসহ সব ধরনের প্রাণীকে বাঁচাতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।’

বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের মাধ্যমে জব্দ করা পাখির সংখ্যা ২৪ হাজার ৬৭৩টি। আবাসস্থল সংকোচন হচ্ছে, জনসচেতনতার অভাব, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা ব্যাহত হওয়াসহ আরও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সবার সহযোগিতা লাগবে।’

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অভ নেচার এর সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ বি এম সারোয়ার আলম বলেন, ‘পরিযায়ী পাখির মধ্যে আমদের দেশে সাধারণত হাস জাতীয় পাখি, সৈকত পাখির আগমন বেশি ঘটে। হাকালুকি হাওড়, টাংগুয়ার হাওড়ে পাখির আনাগোনা সবচেয়ে বেশি হয়।’

‘সারাবিশ্বে ৩৩ হাজার পরিযায়ী পাখি আজ হুমকির মধ্যে আছে। তারা বাংলাদেশে আসে আট হাজার মাইল অতিক্রম করে। সাত মাস অবস্থান করে তারা। হাওড়গুলো ছাড়া প্রায় ১৫০-২০০ এলাকায় তারা অবস্থান করে। আবাসস্থল কমে আসা, পাখি নিধন, পানি কমে আসাসহ বেশ কিছু সমস্যার মধ্যে পড়ছে এসব পাখিরা। আবাসস্থলগুলোর মধ্যে আমরা যদি ৮ থেকে ৯টি এলাকা সংরক্ষণ করতে পারি তাহলেই অনেকখানি নিরাপদ হবে ওদের আবাস।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত