রাইআন কাব্য

২০ নভেম্বর, ২০১৫ ১২:০৭

দণ্ড কার্যকরের আগে খুলছে না ফেসবুক!

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের আপিল বিভাগের রায় পুনঃবিবেচনার আবেদন খারিজের পর নাশকতার আশঙ্কায় দেশব্যাপী বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, লাইন সহ সামাজিক যোগাযোগের অনেকগুলো মাধ্যম।

সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির অনুরোধে বিটিআরসি সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়। প্রাথমিকভাবে কারিগরি জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুলে সোয়া এক ঘণ্টা বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সেবা। পরবর্তীতে ইন্টারনেট সেবা চালু করা হলেও বন্ধ থাকে ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধের বিষয়টি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। এটা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) থেকে। ফলে বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে সরকারের গোয়েন্দা তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে।

এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী দুইজনই অভিন্ন সুরে বলেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধের এ সিদ্ধান্ত সাময়িক।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ প্রসঙ্গে বলেন,‘ নাশকতার ঘটার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে আপাতত সামাজিক মাধ্যম বন্ধ আছে। তিনি আরও বলেন,‘ সামাজিক মাধ্যম বন্ধের পর দিনাজপুরে ইতালিয়ান যাজকের ওপর হামলাকারীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে’।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেই ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক মাধ্যমগুলো খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে (শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর) প্যারিস আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার তদন্তে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে ফ্রান্সের পুলিশ। দেশেও সন্ত্রাসী-জঙ্গি গোষ্ঠী এসব মাধ্যম ব্যবহার করে একাধিকবার নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। এ অবস্থায় সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আপাতত এসব মাধ্যম বন্ধ রেখেছে। এমনকি সে দেশের পার্লামেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বেশ কিছু ওয়েবসাইট বন্ধ করার ক্ষমতাও দিয়ে রেখেছে সরকারকে।

বিশেষ পরিস্থিতিতে ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ সাইট বন্ধ করতে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শ ও দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী নাশকতার আশঙ্কার প্রেক্ষিতে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকারকে এ কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

সূত্র জানায়, ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে এমন জেনেও সরকারকে এ কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে মূলত নাশকতা ঠেকাতে। সাম্প্রতিক সময়ে লেখক-প্রকাশক হত্যা, পুলিশ হত্যা, বিদেশী নাগরিক হত্যা ও হত্যাপ্রচেষ্টা কোনমতেই ঠেকাতে পারছিল না সরকার।

গত এক মাসে দেশব্যাপী পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে বিএনপি-জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মী বিস্ফোরক সহ গ্রেফতারের প্রেক্ষাপটে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে তারা মূলত সংগঠিত হচ্ছিল সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের শাস্তির কার্যকরকে কেন্দ্র করেই। তাছাড়া যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদীর ট্রাইব্যুনালের রায়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ব্যাপক নাশকতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি সরকার। এবং সে সব নাশকতা মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে হয়েছিল বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে প্রকাশ।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদ বিএনপি-জামায়াতের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা হওয়ার সুবাদে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা দুই দলই নাশকতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তারা ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করবে, যেখানে মূলত সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণই নেই।

তাছাড়া গত আড়াই বছরে বাংলাদেশ সরকার ফেসবুকের কাছে ৩৭জনের তথ্য চেয়ে আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সুবাদে ফেসবুক থেকে তারা কোন তথ্য পাবে না হিসেবে এ রাস্তা বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়।

একটি সূত্র জানায়, রায়ের পরের দিনই ফেবসুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো খুলে দিতে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে চাইলেও লন্ডনে চিকিৎসার জন্যে যাওয়া বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার মাঝপথে দেশে ফেরত আসা ও তারেক রহমানের জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালন না করা দুই সিদ্ধান্তের কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকরের আগে সামাজিক যোগাযোগ না খুলে দেওয়ার পক্ষে যৌক্তিকতা দেখছে সরকার।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছিলেন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা এবং আলী আহসান মুজাহিদ ছিলেন বেগম জিয়ার সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত