সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১২:৫৩

আলোচনা ফলপ্রসূ, শীঘ্রই খুলছে ফেসবুক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। বৈঠক শেষে তিনি জানান, "নিরাপত্তা ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে, শীঘ্রই দেশে ফেসবুক খুলে দেয়া হবে"।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দুই কর্মকর্তা দীপালী লিবার হেন (দক্ষিণ এশিয়ার পলিসি ম্যানেজার) ও বিক্রম লাংয়ের (রাজনৈতিক ও আইন উপদেষ্টা) সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, আইজিপি শহীদুল হক, র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান, এসবির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারীসহ বিটিআরসি ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

জানা যায়, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি জানানো হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশে ফেসবুকের অ্যাডমিন বসানো, ফিল্টার করার সুযোগ এবং দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি। জবাবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিষয়গুলো নিয়ে তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। তবে কত দিনের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে সে বিষয়ে তারা সুনির্দ্দিষ্ট করে জানাননি।

বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল ফেসবুক। সেবিষয়ে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তারা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে সাময়িকভাবে ফেসবুক বন্ধ রেখেছি। যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন, তারা কথা বলছেন- কবে খুলবেন। তা নিয়েই এ আলোচনা। তিনি আরো বলেন, আমাদের সিকিউরিটির (নিরাপত্তার) ক্ষেত্রে কি প্রয়োজন তা আমরা জানাতে পেরেছি। ফেসবুক কর্মকর্তারা আমাদের কথা শুনেছেন। তারা কতোটুকু সহযোগিতা করতে পারবেন, তাদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। আমরা সবকিছু পর্যালোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত শিগগিরই আপনাদের (গণমাধ্যম) কাছে উপস্থাপন করবো।

কবে নাগাদ ফেসবুক খুলে দেওয়া হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুধু এটুকু বলবো- ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিকল্প পথে ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে নিরাপত্তার প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের যুব সমাজ অনেক ট্যালেন্ট। এ যুব সমাজের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনেক আশা-ভরসা। যারা বিকল্প পথে ফেসবুক খুলছেন সেটি ভিন্ন বিষয়।

ফেসবুকের কাছে আমাদের কি চাওয়ার ছিল, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফেসবুক অনেকে অপব্যবহার করছেন, অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে।

নারী ও শিশুর প্রতি অবমাননাকর বিষয়সহ সাইবার ক্রাইম রোধ এবং আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে ৩০ নভেম্বর ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে ই-মেইলে চিঠি পাঠান তারানা হালিম। তার একদিন পর চিঠির জবাদ দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ, যাতে আলোচনায় বাসার সময় নির্ধারণ করা হয়।

বর্তমানে দেশে ৫ কোটি ৪১ লাখ সক্রিয় ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ।

মানহানিকর কনটেন্ট, নারীর প্রতি অবমাননা, রাজনৈতিক অপপ্রচার ও জঙ্গি কার্যক্রমে উৎসাহ দিয়ে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টির নানা চেষ্টা ফেসবুকের মাধ্যমে ঘটে বলে সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ। কিন্তু ফেসবুকের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো ধরনের চুক্তি না থাকায় ফেসবুকের অপব্যবহারের মাধ্যমে ঘটা এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।

উল্লেখ্য, গত আড়াই বছরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে ৩৭ জনের তথ্য চেয়ে সাড়া পায়নি বাংলাদেশ । ‘গ্লোবাল গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্টস রিপোর্ট’ নামে ২০১৩ সাল থেকে ৬ মাস পর পর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।

গত ১১ নভেম্বর প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তিনজন ব্যবহারকারীর তথ্য চাওয়া হয়।

এর আগে ২০১৩ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে ১২ জন, ২০১৪ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে ১৭ জন ও জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পাঁচজনের তথ্য চেয়েছিল সরকার। ফেসবুক কারও তথ্যই দেয়নি।

তবে ২০১৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে মধ্যে তিনটি ‘কনটেন্ট’ দেখার সুযোগ বন্ধ রাখার বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সাড়া দেয় বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির কর্তৃপক্ষ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত