সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ মার্চ, ২০২৩ ১৩:২৮

চিত্রনায়িকা মাহি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ

ফেসবুক লাইভে এসে পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বলে গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা মাহিয়া মাহি। শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওমরা পালন করতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রাকিব সরকার। দেশে ফিরে বিমানবন্দরেই মাহি গ্রেপ্তার হন। তিনি পুলিশের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তবে তার স্বামী রাকিব সরকার বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছেন সে ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার সকালে ফেসবুক লাইভে এসে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কর্মকর্তাদের কুৎসা রটান মাহি। তিনি দাবি করেন, তার স্বামী রাকিব সরকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুলিশের সহায়তায় দখল করা হচ্ছে। আর এজন্য দেড় কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

এসব মন্তব্যের পর পরই পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানায় মামলা করে। এতে মাহি-রাকিব দম্পতিকে আসামি করা হয়। একইদিন বাসন থানায় আরেকটি মামলা করেন ইসমাইল হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী। এ মামলায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়।

ইসমাইল হোসেনের অভিযোগ, রাকিব ও মাহির নির্দেশে অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে এবং তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। চাঁদা না দেওয়ায় তার ওপর এই হামলা হয়েছে বলেও দাবি করেন মামলার বাদী।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি করেন বাসন থানার এসআই মোহাম্মদ রোকন মিয়া। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে মাহিয়া মাহি ও রাকিব সরকার ফেসবুকের মাধ্যমে ভিডিও শেয়ার করে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর জন্য অভিযুক্তরা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন, উপ-পুলিশ কমিশনার অপরাধ উত্তর, বাসন থানার ওসিসহ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত বিভিন্ন পদের কর্মকর্তাদের অপমান ও হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মিথ্যা, বানোয়াট, আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করেন, যা এক নম্বর আসামি রাকিব সরকার এবং দুই নম্বর আসামি মাহিয়া মাহি সরকার করেছেন।

ব্যবসায়ী ইসমাইলের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বাসন থানার দিঘিরচালার ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে তার (ইসমাইল) রড বাইন্ডিং কারখানা রয়েছে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তরা দীর্ঘদিন চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু চাঁদা না পেয়ে শুক্রবার সৌদি আরবে থাকা রাকিব সরকার ও মাহিয়া মাহির নির্দেশে অর্ধ শতাধিক সন্ত্রাসী সেখানে (ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে) হামলা করে। এতে তিন লাখ টাকার আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা হয়।

দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে বাদী ইসমাইল হোসেন আহত হয়েছেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মামলায় ইসমাইল ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০-১৫ জনকে আসামি করেছেন। সেখানে ২৫ নম্বর আসামি রাকিব সরকার এবং ২৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে মাহিয়া মাহিকে।

শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির স্বামী রাকিব সরকারের গাজীপুর মহানগরীর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে সনিরাজ কার প্যালেসে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় মাহিয়া মাহি গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার (জিএমপি) মোল্যা নজরুল ইসলামকে দোষারোপ করে ফেসবুকে পোস্ট ও লাইভ করেন। তবে জিএমপি কমিশনার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

মাহিয়া মাহির স্বামী রাকিব সরকার গাজীপুরে যুবলীগের রাজনীতি করেন। তার বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। রাকিব সরকারের বড় ভাই সুলতান সরকার গাজীপুর জেলা পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক। পরিবহন সেক্টরে বড় চাঁদাবাজি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূলহোতা হিসেবে তিনি পরিচিত। তার ভাই ফয়সাল আহমেদ সরকার বর্তমানে গাজীপুর মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক এবং গাজীপুর সিটি কপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আরেক ভাই কামরুল আহসান সরকার গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক। মহানগর বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন সরকার ও শওকত সরকারও তাদের নিকটাত্মীয়।

রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে গাজীপুর মহানগরীতে চাঁদাবাজি, গার্মেন্টস ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মাদকের স্পট পরিচালনা, জমি দখল, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি ও অরাজকতা সৃষ্টি এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীদের লালনপালনের অভিযোগ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে।

তাছাড়া বাসন থানা এলাকাসহ মহানগরীর প্রায় সব ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা চাঁদা নেন। এছাড়া ভোগড়া বাইপাস ফলের আড়ৎ (সামছুদ্দিন সুপার মার্কেট) এবং কাঁচাবাজারে যেসব ট্রাক, পিকাপ আসে সেগুলোর প্রতিটি থেকে ৫০ ও ১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়, যেখানে প্রতিদিন ২০০-২৫০টি গাড়ি আনলোড হয়।

গাজীপুর মহানগরীর প্রায় সব গার্মেন্টেসের ঝুট নিয়ন্ত্রণ করেন রাকিব সরকার ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়। বাসন থানা এলাকাধীন ল্যাডন্ডার গার্মেন্টস, বটস গ্যালালি, লালতাপুর গার্মেন্টস, হাসান তানভীর ফ্যাশন লি., লিরিক ফ্যাশন টার্গেট লি., নেটওয়ার্ক ডটকম, মিকি গার্মেন্টস, স্কয়ার লি., টি অ্যান্ড জেড গার্মেন্টস তার লোকজনের নিয়ন্ত্রণে। তারাই প্রতিমাসে ঝুট নিয়ন্ত্রণে নেয়। কোনো গার্মেন্টস মালিক বা কর্তৃপক্ষ ঝুট দিতে অস্বীকৃতি জানালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উসকে দেওয়া হয়। তাছাড়া বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে মালিক পক্ষের ওপর আক্রমণ চালানো হয়।

এই ঝুট থেকে প্রতি মাসে ৭০-৮০ লাখ টাকা আয় করেন রাকিব। তার ঝুটের ব্যবসা দেখভাল করেন তার ঘনিষ্ট সহযোগী আরিফ, নাজমুল ও আলমগীর।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত