সিলেটটুডে ডেস্ক:

১৩ মে, ২০২৩ ২৩:৩৬

‘মৃত্যু-ভয়ে আছি, আমাদের দ্রুত সরিয়ে নিন’

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’

‘সবাই মৃত্যুর ভয়ে আছি। সাগরের বুকে আমাদের বসবাস, তাই অনেক ভয় কাজ করছে। সরকারের কাছে দ্বীপবাসির চাওয়া, বিশেষ ব্যবস্থায় যাতে দ্বীপে থেকে যাওয়া প্রায় ৮ হাজার মানুষকে খুব দ্রুত টেকনাফে নিয়ে যাওয়া হয়।’ ফোনের ওপারে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে কথাগুলি বলছিলেন সেন্টমার্টিন দ্বীপের মাঝার পাড়ার বাসিন্দা নুর কামাল। খবর সমকালের

এর মধ্যে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় এবং তার পরে শনিবারেও সেইন্ট মার্টিনের প্রতিটি মসজিদে দ্বীপবাসীর জন্য দোয়া হয়েছে। ভয়ের কারণের কথাও বললেন নূর কামাল যে, রেডিও-টেলিভিশনে সবাই যেভাবে ঘূর্ণিঝড় মোখার সেন্টমাটিনে আঘাতের কথা বলছে, তা যদি হয় তাহলে তো আমরা কেউই প্রাণে বাঁচবো না!।

দ্বীপটির সি প্রবাল হোটেলের মালিক আব্দুল হাফিজ বললেন পরিস্থিতির নাজুকতার কথা।

তিনি জানালেন, ‘যারা টেকনাফে যেতে পারেনি, তারা দ্বীপের নতুন তৈরি হওয়া কোস্ট গার্ড ভবন, হাসপাতাল, হাই স্কুল, লাইট হাউস ও ডাক বাংলোর মতো জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। অল্প কয়েকজন বাড়ি-ঘর পাহারা দিচ্ছে। বাতাস একটু বাড়লে আমিও আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাব।’

আবহাওয়া দপ্তরের এ পর্যন্ত দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী তীব্র ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের ভূভাগে প্রথম আঘাত হানবে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। সেখানে সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। সেন্টমার্টিনের পূর্বে মিয়ানমার, উত্তরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ। পশ্চিমে ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। গত শুক্রবারে যখন ৮ নং সতর্কসংকেত দেওয়ার পর দ্বীপটির সাথে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার আগে প্রায় দুই হাজার দ্বীপবাসী টেকনাফে চলে আসতে পারেন। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত জাহাজ চলাচল সম্ভব ছিল, তখনও দ্বীপটি থেকে বিপন্ন মানুষদের টেকনাফে আনার সরকারি আয়োজন দেখা যায়নি।

যদিও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: কামরুজ্জামান বলেছেন, ‘আমরা ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের চার হাজার মানুষকে হাসপাতালসহ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য হলো ঝুঁকিতে থাকা ৩০ হাজার মানুষকে সরিয়ে আনা।’

তিনি জানান, ‘আমরা চেষ্টা করছি রাতের ভেতর (শনিবার রাত) তাদের নিয়ে যাওয়ার। আসলে ইচ্ছা থাকলেও এই মূর্হতে দ্বীপ থেকে লোকজন সরিয়ে আনা সম্ভব না। তবে আমরা টেকনাফে হোটেল-মোটেলসহ ১০১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। এর মধ্য আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ৩৭টি এবং হোটেল রয়েছে ৩৭টি। পাশাপাশি আমরা সেন্টমাটিন-শাহপরীর দ্বীপকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই দূর্যোগ মোকাবিলায় দ্বীপের জন্য আমাদের নৌবাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে।’

সেন্টমার্টিন দ্বীপের ইউপি সদস্য মো. খোরশেদ আলম জানান, ‘জোয়ারের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে ঢেউয়ের উচ্চতা বাড়ছে। দ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ জয়নাল জানান, সকাল থেকে দ্বীপে বাতাস বেড়েছে। ফলে দ্বীপের চেয়ারম্যানসহ একটি দল মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্ত আমাদের ভয় হচ্ছে রাত।’

দ্বীপের বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, ‘সকাল থেকে দ্বীপে বাতাসের বেগ বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড় আসলে দ্বীপের বাসিন্দাদের নির্ঘুম রাত কাটে। সাগরের মাঝে আমাদের বসতি। এছাড়া আগের তুলনায় দ্বীপের অবস্থা ভাল না। সাগরে সামান্য পানি বাড়লে দ্বীপের চারদিকে ভেঙে যায়।’

টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপের আশ্রয়কেন্দ্র খালি

শাহপরীর দ্বীপ উত্তর পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষনা করেছে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু শনিবার দুপুর ১টায় এই আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে কোন লোকজনের দেখা পাওয়া যায়নি। দোতলা এই ভবনটির দুই পাশের দুটি টিউবওয়েল থাকলেও তা নষ্ট অবস্থায় পাওয়া গেছে। আধা কিলোমিটার জুড়ে থাকা শাহপরীর দ্বীপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রেও কারো দেখা মেলেনি। নিচে রেডক্রিসেন্ট এর সেচ্ছাসেবক বসে থাকলেও অলস সময় কাটাছিলেন তারা। জালিয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রেও দুপুর ২টায় গিয়ে কোনও আশ্রয়প্রার্থীর দেখা মেলেনি। তবে বাতাস বাড়তে থাকলে মানুষ আসতে পারে বলে জানায় স্থানীয়রা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত