সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১১:৪৮

ঢাকায় জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকীতে পালিত, তাকে জাতির পিতা আখ্যা

রাজধানী ঢাকায় উর্দু গান-কবিতায় পালিত হয়েছে পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। এসময় উপস্থিত বক্তারা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে তাদের জাতির পিতা আখ্যা দিয়ে, যেকোনো মূল্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের দিন ৫ আগস্টকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস হিসেবে আখ্যা দেন। তারা বলেছেন, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ না থাকলে পাকিস্তান সৃষ্টি হতো না, আর পাকিস্তান না থাকলে বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না বলেও মন্তব্য করেন তারা।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নওয়াব সলিমুল্লাহ একাডেমি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মো. সামসুদ্দিন বলেন, ৫ আগস্ট আমাদের বিজয় দিবস, এটিই আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এসময় তিনি জিন্নাহকে স্মরণ করে বলেন, ১৯৪৭ সালে যদি বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে না থাকতো তবে আজ কাশ্মীরের মতো ঘাড় ফেরানোর উপায় ছিল না, ভারতীয় জান্তারা ঘাড়ের ওপর অস্ত্র ধরে রাখতো। জিন্নাহ পাকিস্তানের সঙ্গ নিয়েছে বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আল্লামা ইকবাল হল বা জিন্নাহ এভিনিউর নাম কেন পরিবর্তন করতে হবে? কারণ দিল্লি এগুলোর পরিবর্তন চায়, তাই করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এগুলো চাই না। তাই বাংলাদেশকে চীন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক করতে হবে।

আরেক বক্তা নজরুল ইসলাম বলেন, যেকোনভাবেই হোক আমরা স্বাধীন হয়েছি। আমাদের পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ না থাকলে পাকিস্তান সৃষ্টি হতো না, আর পাকিস্তান না থাকলে বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো না। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ আমাদের জাতির পিতা, কিন্তু সেটা আমরা স্বীকার করি না। কিন্তু আমাদের ভ্রাতৃত্ব রক্ষা করতে হবে। আর আমি আশা করি, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী প্রতিবছর এখানে (বাংলাদেশ) প্রতিপালিত হবে।

মো. শাখাওয়াত বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে ১৭৫৭ সালের পর যে রাজনৈতিক অদক্ষতা বা হিংসা তার অবসান ঘটান মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। মানুষ হিসেবে জিন্নাহ ছিল অত্যন্ত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। একজন মুসলমানের যে চরিত্র থাকার দরকার তা জিন্নাহর ছিল।

তিনি আরও বলেন, জিন্নাহ যদি ১৯৪৭ সালে এই বাংলাদেশের দায়িত্ব না নিতেন তাহলে এই জাতির অবস্থা পশ্চিম বাংলার মতো হতো। ভারতের একটা অঙ্গরাজ্য হয়ে থাকতো। দায়িত্ব নেওয়ার কারণে ওইদিন তিনি (জিন্নাহ) বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে থাকবে। আমাদের এখন বন্ধুত্বের পরিমাপ করতে হবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডেপুটি হাই-কমিশনার কামরান ধাঙ্গাল বলেন, মুসলিম লীগে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্ব ছিল অসাধারণ। এটি ছিল সমগ্র ভারতের মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গণআন্দোলনের সূচনা। তার স্বাস্থ্য ক্রমশ অবনতির দিকে গেলেও তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রীয় ব্যক্তি, যার নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল।

কামরান ধাঙ্গাল আরও বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর তিনি পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হন। নতুন জাতির জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুস্পষ্ট। তিনি একটি প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের কথা বলেছিলেন এবং স্বাধীনতা ও সহনশীলতার প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। তিনি শুধু পাকিস্তানেই না সারাবিশ্বে সমাদৃত।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলে তিনি আসেননি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনার কামরান ধাঙ্গাল।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। প্রবন্ধে তিনি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের নানা ঘটনাবলি বর্ণনা করেন। অনুষ্ঠানে জাফরুল হক জাফর জিন্নাহকে নিয়ে একটু উর্দু কবিতা পাঠ করেন। বাংলাদেশে অধ্যয়নরত দুইজন পাকিস্তানি শিক্ষার্থী মো. তাহির ও কামরান আব্বাস জিন্নাহকে নিয়ে উর্দুতে গান পরিবেশন করেন। একাডেমির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আব্দুল জাব্বারের সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মো. সামসুদ্দিন, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, মো. শাখাওয়াত, সাইদুর রহমান, আবু হানিফ, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে, ঢাকায় প্রথমবারের মতো মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে সমালোচনার ঝড়। বেশিরভাগই এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না।

মানস কে মন্ডল ক্ষোভের সঙ্গে ফেসবুকে লেখেন, লর্ড ক্লাইড না হলে বাংলাদেশ হতো না। লর্ড ক্লাইডকে বাংলাদেশের জাতির জনক বানানোর দাবি করছি। লর্ড ক্লাইড ইজ বেটার দ্যান জিন্নাহ।

ফটোসাংবাদিক এইচ এম শহিদুল ইসলাম ফেসবুকে লেখেন, বাংলা ভাষার বিপক্ষে কথা বলা জিন্নাহ'র নামে কেন অনুষ্ঠান হবে বাংলাদেশের মাটিতে?

শহিদুল ইসলামের ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে রাজীব রাসেল লেখেন, কারণ বাংলা ভাষার দিন শেষ। দেশ একবার স্বাধীন অইয়া আবার স্বাধীন অইগেছে।

অনুষ্ঠানের একটি ছবি সেয়ার করে শাহজাবিন মিনি ফেসবুকে লেখেন, জন্মই যাদের আজন্মের পাপ...

সাবেক ছাত্রদল নেতা মুহাম্মদ এরশাদ খান ফেসবুকে লেখেন, গতকাল ছিল মহান মুসলিম নেতা, কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নার ৭৬তম মৃত্যু বার্ষিকী। আমি তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি। জিন্নাহ এর কারণেই আমরা আজ প্রকাশ্যে আল্লাহ-রাসুলের নাম নিতে পারছি, কোরবানি দিতে পারছি, ইসলামের মাহাত্ম্য পাবলিকলি প্রচার করতে পারছি। জিন্নাহ যদি ব্যার্থ হতেন, তাহলে আমাদেরকেও আসাম এবং কাশ্মিরি মুসলমানদের মত দুর্বিষহ জীবন ধারণ করতে হতো। জিন্নাহ পাকিস্তান বানিয়েছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় জন্ম হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত