সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ০১:২৮

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মব সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে: বজলুর রশীদ ফিরোজ

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সারাদেশে মবসন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।

ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৬তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে শুক্রবার বিকেল ৪টায় আলোচনার সভা শুরু হয়। চারণের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিখিল দাসের সভাপতিত্বে সভায় আলোচক হিসেবে ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি শাহজাহান কবীর, কবি কামরুজ্জামান ভুঁইয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব অদিতি ইসলাম।

বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গত এক বছরে উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান ঘটেছে। এই ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাজার, মন্দির, পীরের দরগা, লালনের আখড়া, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য আক্রমণ ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে চলেছে।

শুধু তাই নয়, কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মব লিঞ্চিং বা গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। একজন ধর্মীয় লোক দার্শনিক নুরা পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে প্রকাশ্যে পুড়ে ফেলা, নারীদের খেলা বন্ধ করাসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাঁধা প্রদান করেছে।’

এসব কর্মকাণ্ডের দায়ে অন্তর্বর্তী সরকার মব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ফিরোজ বলেন, সরকার এই মবকে প্রেসার গ্রুপ বলে উৎসাহিত করছে। সরকারের প্রশ্রয়ে এরা বেপরোয়া। এটি গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সারাদেশে মব সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।’

বাসদসহ চারটি বাম দল শুক্রবার বিকেলে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। জুলাই সনদের প্রেক্ষাপট নিয়ে ফিরোজ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ৭২-এর সংবিধানের মূলনীতি পরিত্যাগ করে জুলাই সনদ তৈরি করেছে। এটি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ পাকিস্তানি অপশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছরে যে সংগ্রাম বাঙালি জনগণ করেছিলেন, সেই সংগ্রামের নির্যাস। তাই বাসদসহ বামপন্থীরা এই সনদে স্বাক্ষর করছে না। সংস্কৃতি কর্মীরাও এটাকে সমর্থন করবেন বলে আশা করি।’

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ফকির লালন ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন লোক দার্শনিক। তিনি বাউল চিন্তার আলোকে জাত-পাত, ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানবতার জয়গান গেয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও তিনি সমাজের ব্রাত্যজনের চলমান অন্তঃস্রোতের ভাব-সম্পদ ধারণ করতে পেরেছিলেন।

ভারতবর্ষের নব জাগরণের দিকপাল রাজা রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগর ইউরোপীয় আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সান্নিধ্যে আলোকিত হয়েছিলেন কিন্তু লালন তা পায়নি। তিনি পেয়েছিলেন আমাদের মাটিতে ছড়িয়ে থাকা অন্তজশ্রেণির ভাব সম্পদ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত