শাকিলা ববি

১০ অক্টোবর, ২০২৫ ০১:০৪

সিলেটে পার্সেল সার্ভিস আর দাপ্তরিক চিঠিতে টিকে আছে ডাক সেবা

একসময় দূরের আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ডাকঘর। দূরের স্বজনদের কাছে চিঠির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতেন মানুষজন। দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ডাক যোগে এই চিঠি পৌঁছাতে সময় লাগতো এক সপ্তাহ। তাই তখন এই চিঠিই ছিল মানুষের আবেগ।

তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির কল্যাণে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়। তখন এসএমএস, ইমেইল, অডিও কল, ভিডিও কলের ব্যবহার বাড়তে থাকে। এখন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মানুষজন বিশ্বের যেকোনো দেশে সরাসরি ভিডিও কলে কথা বলতে পারেন। তাই ডাকঘর অনেকটা ভুলেই গেছেন মানুষজন।

দেশের বেশিরভাগ ডাকঘরে যেখানে শুধুমাত্র সরকারি ও বেসরকারি দাপ্তরিক চিঠি আদান প্রদানের কাজে ব্যবহৃত হয় সেখানে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলের ডাকঘরে বেড়েছে দেশি বিদেশি পার্সেল সার্বিস সেবা। পার্সেলে সার্বিসে প্রতি মাসে প্রায় ৯০ লাখ টাকার ট্রানজেকশন হয় বলে জানিয়েছেন সিলেটের প্রধান ডাকঘরের সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. বেলাল হোসেন।

বৃহস্পতিবার ছিলো বিশ্ব ডাক দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়।

সিলেট ডাকঘরের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায় সিলেটের ডাকঘর টিকে আছে দেশি বিদেশি পার্সেল সার্ভিস ও দাপ্তরিক রেজিস্টার চিঠির সেবা প্রদান করে। আগে যেখানে শুধুমাত্র ট্রেনের উপর নির্ভরশীল ছিল সিলেট ডাকঘর এখন তাদের নিজস্ব ৫ টনের ২টি মেইল মটর (গাড়ি) আছে। এই নিজস্ব গাড়ি সার্বিস সিলেট বিভাগে অভ্যান্তরিনভাবে শুরু হয়েছে ২০১৮ সালে থেকে। তবে ২০২৪ সাল থেকে ঢাকা সিলেট মেইল মটর চালু হয়। প্রতিদিন সিলেট থেকে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে একটি মেইল মটর ঢাকা রওয়ানা হয়। এবং ঢাকা থেকে রাত ৮ টায় একটি মেইল মটর পার্সেল চিঠিসহ সব নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। বছরে প্রায় তিনলাখ চিঠি বিলি হয় সিলেট ডাকঘর থেকে।

সিলেট বিভাগে ৪টি প্রধান ডাকঘর আছে। এরমধ্যে সিলেট ও মৌলভীবাজার ডাকঘর এ গ্রেড। হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ ডাকঘর বি গ্রেড। সিলেট জেলায় ১৬টি উপজেলা ডাকঘর, ৫৫টি উপ ডাকঘর, ৪৯ টি শাখা ডাকঘর আছে। শিগ্রই সিলেট ডাকঘর সিলেট জিপি (জেনারেল পোস্ট অফিস) এ উন্নত হবে।

সিলেট প্রধান ডাকঘরের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটে প্রতি মাসে প্রায় ৯০ লাখ টাকার ট্রানজেকশন হয় শুধুমাত্র দেশি বিদেশি পার্সেল সার্বিস সেবার মাধ্যমে। গত আগস্ট মাসে বিদেশী রেজিস্টার চিঠি ও পার্সেল পাঠানো হয়েছে ১১৯৬টি। বিদেশী রেজিস্টার চিঠি ও পার্সেল বিলি করা হয়েছে ৩১১টি। দেশেরে অভ্যন্তরীণ পার্সেল পাঠানো হয়েছে ৯৬২টি, বিলি হয়েছে ১৫৯২টি। আগস্ট ২৩ হাজার ২৭৪টি রেজি আর্টিকেল ( রেজিস্টার চিঠি) বিলির জন্য প্রাপ্ত হয়। সেপ্টেম্বর মাসে ২৭ হাজার ৬৯৮টি রেজি আর্টিকেল ( রেজিস্টার চিঠি) বিলির জন্য প্রাপ্ত হয়। পাশাপাশি সব পাবলিক পরীক্ষার খাতা ডাক বিভাগের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। পাশাপাশি পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স পরিবহন করা হয়।

এছাড়া ইলেকট্রিক মানি অর্ডার একসময় ডাকঘরে খুব জনপ্রিয় ছিল। ইলেকট্রিক মানি অর্ডার ২০১০ সাল থেকে চালু হয়। এরপর অনেক সেবা দীর্ঘদিন চলে। তবে বর্তমানে বিকাশ, নগদের মত মানি ট্রান্সফার অ্যাপ আসার পর ডাক বিভাগের ইলেকট্রিক মানি অর্ডার কমে আসে। বর্তমানে ইলেকট্রিক মানি অর্ডার সেবায় মাসে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ট্রানজেকশন হয়।

এ ব্যাপারে সিলেট প্রধান ডাকঘরের সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. বেলাল হোসেন বলেন, আমরা অর্ধেকের কম জনবল নিয়ে কাজ করছি। জনবল ঠিক থাকলে সেবা বাড়ানো যেত। এতে সেবা গ্রহীতারা যেমন ভাল সেবা পাবেন তেমনি ডাকঘরের আর্থিক উন্নতি হবে। আমাদের যে প্রচলিত সার্বিস আছে সেগুলো দিয়েই ডাকঘর আবারও জনপ্রিয় করার সুযোগ আছে। সিলেট ডাকঘরে গ্রাহরা এখন সবচেয়ে বেশি দেশি বিদেশি পার্সেল সার্বিসের সেবা নিচ্ছেন। এরমধ্যে বিদেশী পার্সেলই বেশি আসে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেখা যায় বিদেশি পার্সেলগুলো অনেক বড় আকারের হয়। কিন্তু আমাদের গাড়িগুলো ছোট হওয়ায় ওই পার্সেলগুলো পরিবহনে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়।

পার্সেল সার্বিসে উন্নত ট্রান্সপোর্ট আনতে পারলে সিলেট ডাকঘর লাভবান হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিজনেবল ফল আনার সুযোগ আছে। ডাকের মাধ্যমে। কিন্তু পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি যানবাহন না থাকায় আমরা পারি না। আমাদের ভাল মানের যানবাহন থাকলে আমের এক সিজনে সেবা দিয়ে কয়েকটি পোস্ট অফিসের আয় উঠানো যেত। কিন্তু আমাদের সেই সুবিধা নেই। আমাদের আছে মাত্র দেড়টনের ১টি মেইল গাড়ি। কিন্তু আমাদের সিলেটে অভ্যন্তরীণ সেবার জন্য দরকার তিনটনের তিনটি গাড়ি। জেলাপর্যায়ের জন্য ১০ টনের গাড়ি দরকার তিনটি। কিন্তু আছে দেড়টনের ১টা গাড়ি আছে।

পর্যাপ্ত জনবল নেই উল্লেখ করে মো. বেলাল হোসেন বলেন, ডাকঘর আপডেট করা দরকার। এইজন্য প্রয়োজন দক্ষ জনবল। ৪০ বছর আগের নিয়োগ দেওয়া মানুষ এখনো চাকুরীতে আছে। যারা বেশিরভাগই বর্তমান আপডেট সেবা সম্পর্কে অবগত নন। ২০১৭ সালে যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই চাকুরি ছেড়ে চলে গেছেন এই দপ্তরে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে। দেখা যায় একদিকে নিয়োগ দেওয়া হয় অন্যদিকে পোস্ট খালি হয়ে যায়। সিলেটের ডাকঘরে মোট পদ আছে ২১০টি। এরমধ্যে ১ম শ্রেণীর ২টি পদ। ৩য় শ্রেণীর পদ আছে ১৬৯টি এরমধ্যে কর্মরত আছেন ৬৩ জন, ১০৮টি খালি আছে। ৪র্থ শ্রেণীর পদ আছে ৩৯ টি আছে। কর্মরত আছেন ১৭ জন আছেন। ২২টি খালি। এখন এই কম জনবল নিয়েই আমরা সব্বোর্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত