নিউজ ডেস্ক

১৬ মার্চ, ২০১৬ ০৮:৪৭

হোমিও চিকিৎসক হত্যা : ‘দায় স্বীকার’ আইএস’র

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় 'শিয়া মতাদর্শী' হোমিও চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে পরিচিত বেসরকারি সংস্থা সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ আইএসের বার্তার বরাত দিয়ে এমন দাবি করেছে।

সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার মসজিদ মার্কেটে নিজের চেম্বার বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার পথে উপজেলা কৃষি অফিসের পাশে এলোপাথারি কুপিয়ে জখম করা হয় আব্দুর রাজ্জাককে। পথচারিরা তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে মারা যান আব্দুর রাজ্জাক।

আব্দুর রাজ্জাক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে প্রথমে প্রচার করা হয়। তবে হত্যার বিষয়টি জেনে বাড়ি থেকে লাশ নিয়ে যায় পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে আব্দুর রাজ্জাককে বিকেলে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, সোমবার রাতে কালীড়গঞ্জ নিমতলা বাসষ্ট্যান্ডে নিজের খোমেনি হোমিও হলে শিয়া মতাদর্শের লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করেন আব্দুর রাজ্জাক। হোসনি  দালান, ইরানসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন তার কাছে আসতেন।

তবে আব্দুর রাজ্জাক শিয়া মতবাদের ছিলেন না বলে দাবি করেছেন তবে তার বাবা ও ভাইয়েরা। তারা সবাই সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী।

ঝিনাইদহ ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের জেলা আমীর আব্দুর বারী জানান, ১০/১৫ বছর আগে আব্দুর রাজ্জাক তার দলের একজন সদস্য ছিলেন। এখন তিনি শিয়া মতবাদের ওপর চলাফেরা করতেন বলে শুনেছেন।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার নিহতের বড় ভাই শওকত আলী খান বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জে থানায় একটি মামলা করেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী শহানাজ খাতুন জানান,  কয়েক মাস আগ থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা মোবাইলে খুনের হুমকি দিয়ে আসছিল তার স্বামীকে। এ নিয়ে তারা বেশ আতংকে ছিলেন। আব্দুর রাজ্জাক-শহানাজ খাতুন দম্পতির ইরানী (১০) ও রাহবার নামে দুটি সন্তান রয়েছে।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারী ও ঈমাম আব্দুর রাজ্জাক  ইসলামী ঐক্য আন্দোলন পার্টির উপজেলা সেক্রেটারি ছিলেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে এ হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সংগঠন কিংবা উগ্রপন্থিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন ওসি।

এলাকাবাসী জানায়, আব্দুর রাজ্জাকের গ্রামের বাড়ির পাশে মাদক দ্রব্য কেনাবেচা হত। তার অভিযোগে মাস দেড়েক আগে মাদক ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে দেয় পুলিশ। এ নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা তার উপর ক্ষুব্ধ ছিল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নীরব হোসেন জানান, হত্যাকাণ্ডের 'ক্লু' উদ্ধারে পুলিশ অনুসন্ধানে নেমেছে। কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। সোমবার আব্দুর রাজ্জাক ব্যাংক থেকে দেড় লাখ টাকা তুলেছিলেন। সেই টাকার জন্য তাকে খুন করা হয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার বিরোধের বিষয়টিও রাখা হচ্ছে বিবেচনায়।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত