সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ মার্চ, ২০১৬ ০১:২৬

রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রুল : চূড়ান্ত শুনানি আজ

বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে অন্তর্ভুক্তির বিধান নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রুলের চূড়ান্ত শুনানি আজ (সোমবার) অনুষ্ঠিত হবে।

রিটকারীদের পক্ষের আইনজীবী জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন ‘শুনানির জন্য রোববার (২৭ মার্চ) দিন ধার্য ছিল, কিন্তু হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ১ দিন পিছিয়ে ২৮ মার্চ শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।’ ওই দিন দুপুর ২টা হতে ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত রুলের শুনানি হবে বলে জানান এ আইনজীবী।

জগলুল হায়দার বলেন, ‘‘আমাদের আবেদনের মূল কথা হলো, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার মাধ্যমে সংবিধানের অসাম্প্রদয়িক চরিত্রকে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানের মূল নীতি পরিবর্তন করা যায় না, যা করা হয়েছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে স্থান দিয়ে৷''

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়, যা কার্যকর হয় ঐ বছরেরই ১৬ ডিসেম্বর থেকে৷ সেই সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি ছিল – ১. জাতীয়তাবাদ, ২. গণতন্ত্র, ৩. সমাজতন্ত্র এবং ৪. ধর্মনিরপেক্ষতা৷ অর্থাৎ সংবিধানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা৷

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়৷ এরপর ক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান৷ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে প্রস্তাবনার আগেই ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম' (দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম) – এই কথাটি সংযোজন করা হয়৷

তারপর ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চরিত্রটিই পরিবর্তন করে দেন তখনকার স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ৷ তাঁর শাসনামলে সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ সংবিধানের ঐ অষ্টম সংশোধনীতে বলা হয়, ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে৷''

সোমবার (২৮ মার্চ) বিচারপতি নাইমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্তির বিধান নিয়ে শুনানি গ্রহণ করবেন। বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতি হলেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল।

এদিকে রিটের বিপক্ষে অর্থাৎ রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের পক্ষে রোববার (২৭ মার্চ) পক্ষভুক্ত হতে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি আবেদন দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবিএম নুরুল ইসলাম। তিনি তার আবেদনে বলেছেন, ‘তিনি একজন মুসলিম। নৈতিক দিক বিবেচনা করে আদালতের বিশেষ বেঞ্চকে আইনি এবং ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা করতে চান।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাদ দিলে বিশ্বের ১৮ কোটি মানুষ মনক্ষুণ্ন হবে। বিষয়টি আদালতের বিবেচনা করা প্রয়োজন।’ উল্লেখ্য, এই আইনজীবী ইসলাম ধর্মের ফতোয়ার বিষয়ে আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনা করেছেন।   
 
এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য ২৭ মার্চ দিন ধার্য করেন আদালত। একইসঙ্গে এই মামলায় আইনি সহায়তাকারী হিসেবে ১৪ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

রোববার আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডা. কামাল হোসেন ও আইনজীবী জগলুল হায়দার আফ্রিক। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকালে কার্যত বিরোধীদল বিহীন চতুর্থ জাতীয় সংসদে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী অনুমোদন হয়।

এর মাধ্যমে সংবিধানে উল্লিখিত অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২ (ক) যুক্ত করা হয়। ২ (ক)-তে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম।’

রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে এই পরিবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তখনই ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে এ রিট আবেদনটি দায়ের করেন।

রিট আবেদন দায়েরের দীর্ঘ ২৩ বছর পর রিট আবেদনকারীর পক্ষে ২০১১ সালের ৮ জুন একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সেদিনই বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেছিল।

একই সঙ্গে হাইকোর্ট অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ১৪ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন আদালত। তারা হলেন- টি এইচ খান, কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, এম জহির, মাহমুদুল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আখতার ইমাম, ফিদা এম কামাল, আজমালুল হোসেন কিউসি, আবদুল মতিন খসরু, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এ এফ এম মেসবাহ উদ্দিন। এদের মধ্যে এম জহির ও মাহমুদুল ইসলাম মারা গেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৫ জুন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের ওই ২ অনুচ্ছেদ আবারও সংশোধন করা হয়। এরপর রিট আবেদনকারীর পক্ষ পঞ্চদশ সংশোধনীতে থাকা ওই বিধান চ্যালেঞ্জ করে সম্পূরক আবেদন করে।

রুলে পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা ২ (এ) অন্তর্ভুক্তি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী হাইকোর্ট বিভাগে দায়িত্ব পালনের পর আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে গত বছর অবসরে যান। দীর্ঘদিন পর রুলটির চূড়ান্ত শুনানির জন্য সোমবার (২৮ মার্চ) দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত