সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ মে, ২০১৬ ০০:৪৯

তালিকাভূক্ত সেই জেএমবি সদস্যকে আ'লীগ থেকে অব্যাহতি

রাজশাহীর বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য আব্দুস সালামকে দেয়া মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি ফ্যাক্স বার্তা মঙ্গলবার রাতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ওই ইউপি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা বাগমারা উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের প্রশিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও নজরে আসে বিষয়টি। সন্ধ্যার পর পরই তিনি এক ফ্যাক্স বার্তায় আব্দুস সালামের মনোনয়ন প্রত্যাহার ও আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতির বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেন।

এ প্রসঙ্গে গোয়ালকান্দি ও শ্রীপুর ইউপি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, "বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত একটি ফ্যাক্স বার্তা পেয়েছি। এতে বলা হয়েছে, 'রাষ্ট্রবিরোধী ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় আব্দুস সালামকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।'

রিটার্নিং কর্মকর্তা তৌহিদুল আরও বলেন, 'তার (সালাম) মনোনয়ন বাতিলের চিঠি পাওয়ার পর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আইনের আলোকে মতামত দেবে।'

তালিকাভুক্ত শীর্ষ জেএমবি সদস্যকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

এ প্রসঙ্গে বুধবার দুপুরে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, 'আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সালামের দলীয় মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। আগামী ৭ মে নির্বাচন হওয়ায় ওই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় প্রার্থী থাকছে না। আব্দুস সালামের দলীয় মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে।'

রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত ডিআইজি নিশারুল আরিফ বলেন, 'আব্দুস সালাম পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন শীর্ষ জেএমবি সদস্য। তার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ খোঁজ-খবর নিচ্ছে।'

এদিকে, জেএমবি সদস্য সালামের মনোনয়নের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আন্দোলন করে আসছিলেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। মনোনয়ন বাতিলের খবরে সমকালকে তিনি বলেন, 'এটা তৃণমূল আওয়ামী লীগের বিজয়। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির পরাজয় হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আব্দুস সালাম কোনোভাবেই মনোনয়ন পাওয়া যোগ্য ছিলেন না। তথ্য গোপন করে স্থানীয় সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা তার মনোনয়ন এনে দেন।'

এতে ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর সরকারকে বিদ্রোহী প্রার্থী করে তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নামে বলেও জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও জানান, জেএমবির সদস্য হিসেবে মানুষকে নির্যাতন করায় আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে এখনও একাধিক মামলা চলমান। মনোনয়ন পাওয়ার পর পরই আব্দুস সালাম জেএমবি সদস্যদের এলাকায় ফিরিয়ে এনে আবারও সংগঠিত করছিল।

এ ব্যাপারে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাংসদ এনামুল হক বলেন, 'মনোনয়ন দেয়ার মালিক প্রধানমন্ত্রী। সেখানে স্বাক্ষর করেছে উপজেলা, ইউনিয়ন ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারি। এরপর প্রধানমন্ত্রী তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আব্দুস সালাম জেএমবির কোনো সদস্য না; এটা মিথ্যা-বিভ্রান্তিকর। খালি নিউজ করলেই হবে না।'

তিনি আরও বলেন, '২০০৮ সালে আব্দুস সালাম নৌকার ভোট করেছে। আলমগীর কখনও নৌকার ভোট করেনি। জেএমবির এক নম্বর ক্যাম্প ছিল আলমগীরের বাড়িতে। এজন্য তার ভাইকেও সর্বহারারা খুন করেছে। এগুলো এতদিন আমরা বলিনি। এখন আমরা বলব।'

এ প্রসঙ্গে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, 'সাংসদ এনামুল হক আওয়ামী লীগের একটি সাদা ফরম্যাটে আমাদের স্বাক্ষর নিয়েছিলেন। পরে সেখানে আমাদের অগোচরে প্রার্থীর নাম বসায়। আমরা কখনোই জানতাম না সেখানে জেএমবি সদস্য আব্দুস সালামের নাম রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আলমগীর সরকারের বাড়িতে কখনোই জেএমবির ক্যাম্প ছিল না। তার বাবা ও দাদা দুজনই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।'

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, 'সালাম জেএমবি সদস্য, এটা আমাদের জানা ছিল না। সাংসদ এনামুল হক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনিসহ স্থানীয় নেতাদের স্বাক্ষর করা একমাত্র সুপারিশকৃত প্রার্থী ছিলেন আব্দুস সালাম। তাই জেলা আওয়ামী লীগও তাকে সুপারিশ করেছে।'

সূত্র : সমকাল

আপনার মন্তব্য

আলোচিত