অনলাইন প্রতিবেদক

১৬ মে, ২০১৬ ১৩:৪০

নিজামীর জন্যে এরদোয়ানের মায়াকান্না অব্যাহত!

একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার প্রকাশ্য অংশীদার, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামির আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির পর তার পক্ষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়েপ এরদোয়ানের মায়াকান্না অব্যাহত রয়েছে। এ দণ্ড কার্যকরের প্রতিবাদের পর এবার তিনি চটেছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতাদের ওপর।

রোববার ইস্তম্বুলে এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি পশ্চিমা নেতাদের বিরুদ্ধে ‘দ্বিমুখী’ আচরণের অভিযোগ এনেছেন বলে খবর দিয়েছে আরব নিউজ।

এরদোয়ান বলেন, “আপনারা যদি সত্যিই রাজনৈতিক হত্যার বিরোধী হয়ে থাকেন, তাহলে কযেক দিন আগে মতিউর রহমান নিজামী যখন শহীদ হলেন, তখন টু শব্দটি করলেন না কেন?”  

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান একাত্তরে ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহেযোগিতায় গঠিত আল-বদর বাহিনীর প্রধান। ওই বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নকশা বাস্তবায়ন করেছিল।

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, নির্দেশদাতা হিসেবে আদালতে দোষি সাব্যস্ত হন নিজামী। সেই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ১০ মে মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।  

আরও পড়তে পারেন : ‘গণহত্যার সমর্থক এরদোগান’: ৫ মিলিয়ন টুইট

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ নিয়ে পাকিস্তানের মতো তুরস্কও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে আসছে।

নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয় তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নিজামীর ফাঁসির খবরে ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করে সেই বিবৃতিতে বলা হয়, তার ‘এ ধরনের শাস্তি প্রাপ্য ছিল বলে’ তুরস্ক মনে করে না।

ফাঁসির প্রতিবাদে তুরস্কে বিক্ষোভ হয়।ফাঁসি পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনার কথা বলে ঢাকা থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওসতুর্ককে আঙ্কারায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

রোববারের ভাষণে এরদোয়ান বলেন, “আপনারা ইউরোপ থেকে কোনো প্রতিবাদ শুনেছেন?... না। এটা কি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নয়?   

২০০২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এরদোয়ানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি মুসলিম বিশ্বে তুরস্কের প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরুর পর বিভিন্ন সময়ে এর বিরোধিতা করেছে তারা।  

নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর আঙ্কারায় এক অনুষ্ঠানে এর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারেরও সমালোচনা করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

সেদিন তিনি বলেন, “সত্তরোর্ধ্ব একজন মুজাহিদ, পার্থিব পাপ যাকে স্পর্শ করেনি বলে আমাদের বিশ্বাস, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এই মানসিকতার কঠোর নিন্দা জানাই আমি।

“আমি মনে করি, মৃত্যুদণ্ড বন্ধের জন্য বার বার অনুরোধ করার পরও তার ফাঁসি কার্যকরের আদেশ দেওয়ার বিষয়টি সুশাসন বা গণতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচায়ক ছিল না।”

আরও পড়তে পারেন : কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী নিজামীর ফাঁসি কার্যকর

অবশ্য তুরস্ক তাদের রাষ্ট্রদূতকে ঢাকা থেকে ডেকে পাঠানোর পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, “বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয় এ সম্পর্কে ব্যত্যয় ঘটাতে পারবে না।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তুরস্কের বিরোধিতার বিষয়ে তিনি বলেন, “এ বিচারের বিষয়ে এর আগেও তুরস্ক কিছু প্রশ্ন তুলেছিল। আমরা তাদের যথাযথ জবাব দিয়েছি।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত