সিলেটটুডে ওয়েব ডেস্ক

১৩ জুন, ২০১৬ ০১:০৮

বাংলাদেশে শান্তির জন্য রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা করতে হবে : ফরেন অ্যাফেয়ার্সের প্রতিবেদন

বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র বিষয়ক মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’। ম্যাগাজিনটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে নয়, বরং চরমপন্থীদের প্রতি তোষণ এবং বহু বছরের কৌশলের ফলেই এটি ঘটছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘২০১৩ সালে যখন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড শুরু হয় তখনকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হচ্ছিল যে, জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পরবর্তী শিকার হতে পারে বাংলাদেশ। দুই বছরের সামান্য বেশি সময়ে ‍উগ্রবাদীরা এক ডজন ব্লগারসহ সেকুল্যার কর্মী, সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য, হিন্দু এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে হত্যা করেছে।’

পশ্চিমা সরকারগুলোর আশঙ্কা, এই আক্রমণের চিহ্ন বাংলাদেশে আইএসের বিস্তারের ইঙ্গিত দেয় এবং স্থানীয় উগ্রবাদী ইসলামী সংগঠনগুলো আইএসের আরো কাছাকাছি হতে পারে।

চলমান নৃশংস হত্যাকাণ্ডগুলো সম্পর্কে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, এসব হত্যাকাণ্ড সন্ত্রাসবাদ ইস্যুর চেয়ে সরকারের ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার এটিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণ বলছে এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ প্রতিপক্ষকে টার্গেট করছে মাইলামের এই কথা সত্য। তবে বাংলাদেশে এটি নতুন নয়, যেখানে রাজনৈতিকভাবে জয়ীরাই সব খেলা খেলে। চলতি এই সন্ত্রাসের জন্য শুধু আওয়ামী লীগকেই দায়ী করা যাবে না। এটি শুরু হয়েছিল  ২০০৯ সালে তারা ক্ষমতা নেওয়ার আগেই।

জেএমবির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০১৩ সালর হামলার পর থেকে দুটি স্বতন্ত্র সংগঠন এর দায় স্বীকার করছে। এর একটি জামায়াত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এই সংগঠনটি এখন আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আর এই সংগঠনটি ২০০৫ সাল থেকে সক্রিয়, যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশের ক্ষমতায় ছিলো। এর আগে দেশব্যাপী বোমা ফাটিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসে জেএমবি।’

জেমবির সঙ্গে বিএনপির কিছু নেতার সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সংগঠনটি বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার সমর্থন পেয়েছে।’

মার্কিন দূতাবাসের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কথিত আছে জেমবির নেতা বাংলা ভাই এবং আব্দুর রহমান অর্থের বিনিময়ে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও বামদের বিরুদ্ধে ইসলামী যুদ্ধ শুরু করে। যদিও বিএনপি এইসব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।’ বাংলা ভাই’র ডেপুটি মাহতাব কামারুকে তখনকার সরকার আটক করলেও প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের আদেশে তাকে দ্রুতই ছেড়ে দেওয়া হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বরাতে বলা হয়, জেএমবি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থারও সমর্থন পায়। উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তান দূতাবাসের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে ইদ্রিস শেখ নামে একজনের টাকা নেওয়া কথা তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দক্ষিণ-পূর্ব ভারত ও মিয়ানমারে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা সন্ত্রাসবাদে যে সমর্থন দিচ্ছে তা নিয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যেও কথাবার্তা চলছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘আজকের অবস্থার জন্য যদি আওয়ামী লীগকে দায়ী করা হয়, তবে সেটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবে। বরং একে ইসলামী সহিংসতা নিষ্ক্রিয় করার জন্য নেওয়া ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখতে হবে।’

সন্ত্রাসী হামলার ভুক্তভোগীদের অনেকেই যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষের বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনটির শেষদিকে বলা হয়েছে, ‘সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের প্রত্যক্ষ ফলে নয় বরং চরমপন্থীদের প্রতি তোষণ এবং বহু বছরের কৌশলের ফলেই এটি ঘটছে। বাংলাদেশ যদি শান্তিতে থাকতে চায়, তাহলে রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা করতে হবে এবং সেই সঙ্গে জনতার শাসন দিয়ে মোল্লার শাসন প্রতিরোধ করতে হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত