সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ জুন, ২০১৬ ০১:৩৬

পুলিশের নির্যাতনের শিকার ঢাবির সেই কাদেরকে এবার ‘সমঝোতা’র হুমকি

পুলিশের নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র আবদুল কাদেরকে এবার মামলার বিষয়ে 'সমঝোতা'র জন্য চাপ ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নির্যাতনের দায়ে দণ্ডিত খিলগাঁও থানার সাবেক ওসি হেলাল উদ্দিনের পক্ষে বিভিন্নজন এসব হুমকি দিচ্ছেন।

তারা বলছেন, হেলাল ভুল করেছিলেন, তাই বলে বিষয়টি নিয়ে এত 'বাড়াবাড়ি' করাও ঠিক হচ্ছে না। একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যাওয়ার ফল ভালো হবে না। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কে রয়েছেন বর্তমানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক আবদুল কাদের। চাপ ও হুমকি থেকে বাঁচতে বেশিরভাগ সময় তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখছেন।

নির্যাতনের মামলায় গত বছরের মে মাসে হেলাল উদ্দিনকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। তবে সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন হেলাল। এরপর গত এক বছরেও শুরু হয়নি আপিল শুনানি। আসামি পক্ষের আইনজীবী নানা অজুহাত দেখিয়ে বারবার শুনানির তারিখ পেছানোর আবেদন করেছেন বলে অভিযোগ কাদেরের।

২০১১ সালের ১৫ জুলাই রাতে হলি ফ্যামিলি স্টাফ কোয়ার্টারে খালার বাসা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলে ফেরার পথে সেগুনবাগিচায় কাদেরকে আটক করে খিলগাঁও থানার পুলিশ। এ সময় তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। পরে খিলগাঁও থানায় নিয়ে তার পায়ে চাপাতি দিয়ে কোপ দেন তখনকার ওসি হেলাল। পরদিন কাদেরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে পুলিশ। আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কাদেরকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের খবরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন হয়। এক পর্যায়ে মিথ্যা প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা। তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। নির্যাতনের দায়ে খিলগাঁও থানার তখনকার ওসি ও এক এসআইকে বরখাস্ত করা হয়।

আবদুল কাদেরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল গাফফার বলেন, গত বছরে মামলার রায় হওয়ার পরপরই আসামির পক্ষ থেকে আপিল করা হয়। তবে আসামির আইনজীবী এ পর্যন্ত অন্তত সাত-আটবার শুনানির তারিখ পেছানোর আবেদন করেছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি আদালতকে বলেছেন, বাদীর সঙ্গে মামলা সমঝোতার চেষ্টা চলছে এবং এখনও তার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি। সর্বশেষ আগামীকাল ১৩ জুন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আসামি হেলাল উদ্দিন জামিনে রয়েছেন।

আবদুল কাদের বলেন, অনেকদিন ধরেই মামলাটি সমঝোতার জন্য তাকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তবে গত তিন মাসে বিষয়টি তার যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ হেলাল উদ্দিনের আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তি এ নিয়ে তাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। এ তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তারাও রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই একসময় কাদেরের পাশে দাঁড়িয়ে নির্যাতনকারী পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছিলেন।

কাদের জানান, সমঝোতার বিনিময়ে কেউ কেউ তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ারও প্রলোভন দেখাচ্ছেন। কেউ আবার সাবধান করে দিয়ে বলছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিণতি ভালো হয় না। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন 'ক্ষতিপূরণ' হিসেবে কিছু টাকা নিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করাটাই কাদেরের জন্য ভালো হবে। কৌশলী এসব হুমকির ঘটনা নিয়ে কাদের চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। হেলাল উদ্দিন বা তার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তার কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে বলেও শঙ্কায় রয়েছেন কাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিনের আইনজীবী সাইদুর রহমান মানিক তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। হেলাল উদ্দিনের বর্তমান অবস্থানও তার জানা নেই বলে দাবি করেন এই আইনজীবী। ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি মহিলা কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন কাদের। পরে তিনি কুমিল্লায় বদলি হয়ে আসেন। যদিও পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার।

সূত্র : সমকাল

আপনার মন্তব্য

আলোচিত