নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ জুন, ২০১৬ ১৮:৪৭

‘মোদীকে হস্তক্ষেপের কথা বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে’

চলমান পরিস্থিতিতে হিন্দুদের সুরক্ষার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রানা দাশগুপ্ত, সম্প্রতি এমন খবর প্রকাশ করে ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই)। ভারতের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর এ নিয়ে দেশে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

সমালোচনাকারীরা বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলেন। তবে সাম্প্রতিক একের পর এক হিন্দু নাগরিকদের  হত্যার প্রসঙ্গ টেনে রানা দাশগুপ্তকে সমর্থনও করেন কেউ কেউ।

তবে যে বক্তব্য নিয়ে এতে আলোচনা-সমালোচনা এমন কোনো কথা মিডিয়াকে দেননি বলেই দাবি করেছেন প্রবীণ আইনজীবী রানাদাশ গুপ্ত। তাঁর দাবি, পিটিআই বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশ করেছে।

মঙ্গলবার (১৪ জুন) বিকেলে মুঠোফোনে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রানা দাশগুপ্ত বলেন, "পিটিআই আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করেছে, আমি মোটেও কারো হস্তক্ষেপ চেয়ে কোন বক্তব্য দেইনি। বিকৃত বক্তব্য প্রচার করায় তাদের কাছে আমি প্রতিবাদ পত্র পাঠিয়েছি। "

তিনি বলেন, "পাবনায় সেবায়েত হত্যার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে পিটিআই থেকে আমাকে ফোন করা হয়। আমি তাদের সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যা ও সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিয়ে বক্তব্য দিয়েছি।"

মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করা রানা দাশগুপ্ত বলেন, "আমি একজন আইনজীবী, একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হস্তক্ষেপ চেয়ে বক্তব্য দেয়ার প্রশ্নই উঠে না"।

ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম পিটিআই এর সূত্রে ভারতের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ  করে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষার জন্য রানা দাশগুপ্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এই খবর বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর রানা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনেছেন অনেকে। তাকে বিচারের মুখোমুখি করারও দাবি ওঠেছে। আবার রানাদাশগুপ্তকে সমর্থনও করছেন কেউ কেউ। তাঁদের প্রশ্ন, বাংলাদেশের রাজনীতিকরা বিভিন্ন স্বার্থের জন্য অন্য রাষ্ট্রের কাছে প্রায়ই ধর্না দিলে যদি রাষ্ট্রদ্রোহিতা না হয় তবে রানা দাশগুপ্তের বক্তব্যের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে কেনো?

এ বিষয়ে আইনজীবী রাজেশ পাল বলেন, "রানা দাশগুপ্ত আর পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বক্তব্য আইনের ভাষায় পরিষ্কার রাষ্ট্রদ্রোহিতা। যেকোনো রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্যকোন রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আহবান কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।"

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি এ বিষয়ে লেখেন, " উনারা নির্যাতনের বিষয়াবলী জাতিসংঘ বা অপরাপর আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরতে পারতেন। সেটা না করে তাঁরা যা করলেন , একজন মোস্ট সিনিয়র আইনজীবীর নিকট হতে একজন জুনিয়র আইনজীবী হিসেবে আমি তা প্রত্যাশা করিনি মোটেই।

আর এটাকে যারা জাস্টিফাইড মনে করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ে পাকিস্তান আর তুরস্কের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়টি একটু স্মরণ করে দেখুন। যে কারণে আমরা সেটা মেনে নিতে পারিনি , একই কারণে মানতে পারিনা এটাও। "

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয় রানা দাশগুপ্ত বলেছেন , “আমরা মনে করি, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ভারতের কিছু একটা করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর আমাদের অনেক আশা। বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য তার (নরেন্দ্র মোদী) উচিত বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরা।”

তবে ভিন্নমতও জানিয়েছেন অনেকে। কলামিস্ট শিতাংশু গুহ এক কলামে লিখেছেন,

" হিন্দুরা ভারতের দিকে তাকালে কারো কারো মনে গোস্বা আসতেই পারে। কিন্তু এ কথাও মনে রাখতে হবে, কে আছে দেশে হিন্দুদের পাশে? গুটি কয়েক সুশীল, যারা হিন্দুদের চাইতেও বেশি সংখ্যালঘু, ক্ষমতাহীন। বাদবাকি যারা নিজেদের প্রগতিশীল ভাবতে পছন্দ করেন, তারা ‘ইন ডিপ হার্ট’ ভদ্র সাম্প্রদায়িক!"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত