সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ জুন, ২০১৬ ১৬:৪১

রায়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় আহসান উল্লাহ মাস্টারের পরিবার

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও গাজীপুরের জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের আপিলের রায়ে নিহতের পরিবার সন্তুষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও নিহতের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল।  

বুধবার (১৫ জুন) ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলে হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান।
 
রায়ের পর বাবার আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য রাসেল বলেন, “হাইকোর্টের এ রায়ে আমরা আংশিক সন্তুষ্ট; পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, অন্যদের সাজা কমানো হয়েছে এবং কয়েকজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন ও খালাসপ্রাপ্তরা এ হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিল।

“আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। এ জন্য আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। আশা করি আপিলে খালাসপ্রাপ্তদের যথাযথ শাস্তি দেওয়া যাবে।”

বাদীপক্ষের আইনজীবী সাজোয়ার হোসেন বলেন, “আপিল করার বিষয়ে বাদী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে লড়ব আমরা।”

বুধবার (১৫ জুন) দুপুরে বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃঞ্চা দেবনাথের ডিভিশন বেঞ্চ। রায় ঘোষণার সময় জাহিদ আহসান রাসেলসহ ঐ ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রায়ে বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, সোহাগ ওরফে সুরু, নূর ইসলাম দিপু, শাহেদুল ইসলাম শিপু এবং হাফিজের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

এই মামলায় ৩০ আসামির মধ্যে নিম্ন আদালতে মোট ২৮ জনের দণ্ড হয়। এর মধ্যে ২২ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এসব আসামিদের মধ্যে ১৭ জন কারাগারে ও ৯ জন পলাতক রয়েছেন। এছাড়া দুজন মারা গেছেন।

এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণা হয়েছে ২০০৫ সালে। এরপর মামলাটি জেল আপিল ও নিয়মিত আপিলের জন্য হাইকোর্টে চলে আসে। আওয়ামী লীগের তুখোড় এ নেতার হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিলের উপর হাইকোর্টে শুনানি হয়।

চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ), আপিল ও ফৌজদারি বিবিধ আবেদনের উপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে তা শেষ হয় ৮ জুন (বুধবার)।

মামলাটির বিচার সম্পন্ন করা হয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। আপিলের এ রায়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে ২২ জনের ফাঁসি ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেয়া হয়েছিল।

এ মামলায় ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত ২২ আসামি ছিলেন- নুরুল ইসলাম সরকার, মোহাম্মদ আলী, মাহবুবুর রহমান মাহবুব, আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, সোহাগ ওরফে সরু, শহীদুল ইসলাম শিপু (পলাতক), হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ (পলাতক), আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু (পলাতক), ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু (পলাতক), আল আমিন (পলাতক), রতন মিয়া ওরফে বড় মিয়া (পলাতক), রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক),  জাহাঙ্গীর (পলাতক), রতন ওরফে ছোট রতন (পলাতক), আবু সালাম ওরফে সালাম (পলাতক), মশিউর রহমান ওরফে মনু (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া (পলাতক), নুরুল ইসলাম দিপু (পলাতক) এবং সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু (পলাতক)।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৬ আসামি ছিলেন- রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর, নুরুল আমিন, মনির ও অহিদুল ইসলাম টিপু (পলাতক)। এ মামলায় খালাস পান কবির হোসেন ও আবু হায়দার ওরফে মিরপুরইয়া বাবু।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে যে দুজন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা হলেন- ছোট রতন ও আল আমিন। পলাতক ৮ জন হলেন- নুরুল ইসলাম দিপু, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু, আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু, ফয়সাল, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির, মরকুনের জাহাঙ্গীর, মশিউর রহমান ওরফে মশু ও খোকন। এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামির মধ্যে এক আসামি অহিদুল ইসলাম টিপু পলাতক আছেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওমর ফারুক রতন নামে আরেকজন তার সঙ্গে খুন হন। ঘটনার পরদিন নিহতের ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আহসান উল্লাহ মাস্টার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে টঙ্গী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি গাজীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, তদন্ত শেষে এই মামলায় ওই বছরের ১০ জুলাই ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই বছরের ২৮ অক্টোবর ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ৩৪ জন এবং আসামিপক্ষে ২ জন সাক্ষ্য দেন। ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল এই মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৬ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। খালাস পান ২ আসামি।

মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আসামি শহীদুল ইসলাম শিপু ও লোকমান হোসেন হাইকোর্টে পৃথক ফৌজদারি বিধি অনুযায়ী আবেদন করেন। শুধু জেল আপিল করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কানা হাফিজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত