সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ জুন, ২০১৬ ২৩:৩০

বড়লেখার একজনসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৩ শিক্ষককে জঙ্গিদের হুমকি

নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৩ জন শিক্ষক জঙ্গি সংগঠনের হুমকি পাওয়ার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ও তাদের সহযোগী সংগঠন ১৩ জন শিক্ষককে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

১১ জেলার ১২ শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা  জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তাঁদের কোনো ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি। অনেকেই ভয়ে পালিয়ে আছেন। বেশির ভাগ শিক্ষকই জানিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ঠিক নয়। মূলত বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। এঁদের কেউ কেউ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় স্বপদে বহাল হয়েছেন, কেউ কেউ সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খানকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ২ জুন এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছেন।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত দিনে বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যেসব শিক্ষক ইসলাম ও ধর্মীয় বিষয়ে কটূক্তি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের একে একে হত্যা করার পরিকল্পনা নিয়েছে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।

সরকারের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেন তাঁদের নামের তালিকা করা হলো, তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক কি না, সেটা তদন্ত করা হচ্ছে।

তালিকার ১ নম্বরে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। তাঁকে অবশ্য নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। এর আগে স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে তাঁকে মারধর ও কান ধরে ওঠবস করানো হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি তাঁকে সাময়িক বরখাস্তও করে। এ নিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাঁকে পুনর্বহাল করে।

জঙ্গিগোষ্ঠীর তালিকায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা, শরীয়তপুরের জাজিরা, বাগেরহাটের চিতলমারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, জামালপুরের সদর উপজেলা, কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, চান্দিনা, যশোরের অভয়নগর ও মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ১২ জন শিক্ষকের নাম আছে।

জানতে চাইলে বাগেরহাটের একজন শিক্ষক বলেন, আসল ঘটনা হলো স্কুল পরিচালনা কমিটির নির্বাচন। গত বছরের ১২ এপ্রিলের নির্বাচনে একজন কমিটির সভাপতি হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। তিনি তাঁর ষড়যন্ত্রের শিকার।

শরীয়তপুরের শিক্ষক বলেন, ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ঠিক না। একজন শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য ছিল। আবার স্কুল কমিটির নির্বাচন নিয়েও ঝামেলা ছিল।
মৌলভীবাজারের শিক্ষক বলেন, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন নিয়ে অনেক দিন ধরে তাঁর সঙ্গে ঝামেলা চলছিল। হঠাৎ করে কটূক্তির অভিযোগ আনা হলো।

যশোরের শিক্ষক বলেন, ‘আমি যে দোষ করিনি, সেটা তদন্ত কমিটিই বলেছে। শুধু শত্রুতা করে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি বিজ্ঞানের শিক্ষক, ক্লাসে কেন ধর্মীয় কটূক্তি করব? আমার কোনো ছাত্রছাত্রীও এর প্রমাণ দিতে পারবে না।’
সূত্র : প্রথম আলো

আপনার মন্তব্য

আলোচিত