সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ জুন, ২০১৬ ১০:৪৯

বাড়িতে ঢুকে প্রধান শিক্ষিকাকে পেটাল শিক্ষার্থী

পাবনার সুজানগর উপজেলায় এক ছাত্রের বিরুদ্ধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে থাপ্পড় ও ঘুষি মারার অভিযোগ উঠেছে।

গত মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে প্রধান শিক্ষিকার নিজ বাসভবনে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষিকার ভাশুর হানিফ সরদার।

ওই স্কুলছাত্রের নাম সৌরভ (১২)। সে খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে সুজানগর উপজেলার চককুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেফালী সুলতানা প্রাথমিক উপবৃত্তির প্রয়োজনীয় কাজ করতে বিদ্যালয়ে যান। বিদ্যালয়ের অফিস খুলে দেখতে পান, কক্ষের ভেতর কেউ একজন প্রস্রাব করে রেখেছে।

পরে তিনি বিদ্যালয়ের মাঠে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চান, এই কাজটা কে করেছে। ওই সময় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী বলে, খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৌরভ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে অফিসের ভেতর প্রস্রাব করেছে। বিষয়টি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্ত্রী রাজিয়া বেগমকে জানান শেফালী।

এর কিছুক্ষণ পর সৌরভের মা হাওয়া বেগম প্রস্রাব পরিষ্কার করেন। তিনি উপবৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রধান শিক্ষককে দিয়ে চলে যান। এরপরও কক্ষের ভেতর থেকে প্রস্রাবের গন্ধ না যাওয়ায় শেফালী স্কুলের পাশে নিজ বাড়িতে গিয়ে উপবৃত্তির কাজ করছিলেন। দুপুর ২টার সময় সৌরভ ও তার বাবা বজলুর রহমান (৫০) ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং একপর্যায়ে ভ্যানে তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়।

এ সময় সৌরভ অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে করতে শিক্ষক শেফালী সুলতানার ওপর চড়াও হয়ে উপর্যুপরি কিল, ঘুষি ও চড়-থাপ্পড় মারে। উপস্থিত শিক্ষিকার ভাশুর হানিফ সরদার ওই ছেলেকে প্রতিরোধ করে। পরে বাবা-ছেলে ভ্যানে উঠে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ভ শিক্ষক সাংবাদিকদের মোবাইল ফোনে লাঞ্ছিত হওয়ার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করছি।

তবে শিক্ষিকা শেফালী সুলতানা প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আমি এর যথাযথ বিচার চাই, কোনো মীমাংসা মানব না।’

‘এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে আমি বিদ্যালয়ের কোনো কাজ করতে পারব না। এমনকি প্রয়োজনে আমি চাকরি ছেড়ে দেব।’

বিদ্যালয়টির সদ্য সাবেক প্রধান শিক্ষক নাদের হোসেন বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক এবং এর বিচার হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমি বিষয়টি জেনেছি এবং লাঞ্ছিত শিক্ষককে অফিসে আসতে বলেছি।’

পরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা নার্গিস সুলতানার কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ সম্পর্কে জানেন না বলে জানান। ছুটির দিনে উপবৃত্তির তালিকা প্রস্তুতরত ওই শিক্ষিকার লাঞ্ছনার বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে উপবৃত্তির এই তালিকা পাঠাতে হবে। না হলে উপবৃত্তির এ প্রকল্প থেকে ওই বিদ্যালয় বাদ যাবে।

শিক্ষক লাঞ্ছনার ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নার্গিস সুলতানা বলেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মোবাইলে কল করেও পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে জনমনে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। সচেতন মহল উপযুক্ত বিচার দাবি করা হয়েছে।

সূত্র: এনটিভি অনলাইন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত