সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:২২

পরিচয় মিললো মিরপুরে নিহত সেই জঙ্গির

 

রাজধানীর মিরপুরে নিহত সেই জঙ্গির অবশেষে পরিচয় মিললো। তার আসল নাম মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদরের পাঁচথুবি চাঁদপুর মৌজায়। তার বাবা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মা জেবুন্নাহার ইসলাম।

জাতীয় পরিচয়পত্রের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকৃত নাম আড়াল করে জাহাঙ্গীর ছদ্মনামে মানুষের কাছে পরিচিত হতো সে। নতুন ধারা জেএমবির প্রশিক্ষক হিসেবে সে কাজ করতো। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর পরিচয়ে সে জেএমবি সদস্যদের জন্য বাসা ভাড়া করে দিতো। মিরপুরের রূপনগর এলাকার ৩৩ নম্বর সড়কের ওই বাসাটিও সে জাহাঙ্গীর নামে ভাড়া নেয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় যে জঙ্গি আস্তানায় গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম নিহত হয়, ওই বাসাটি ছাড়াও কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানাটিও জাহাঙ্গীর নামে ভাড়া নিয়েছিলো এই জাহিদুল।’

গত শনিবার রাত পৌনে নয়টার দিকে মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার ৩৩ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর বাসায় পুলিশের অভিযানে নিহত হয় জাহিদুল ইসলাম। প্রথমে তার পরিচয় নিশ্চিত না হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে তার নাম মুরাদ ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে ওমর নাম জানা যায়। মধ্যরাতেই তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। শনিবার তার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভাণ্ডারে সংরক্ষিত আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখা হয়। রাতে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
 
এনআইডির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম নামের এই ব্যক্তির জন্ম ১৯৭৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। তার পেশা হিসেবে সরকারি চাকরি লেখা রয়েছে। ভোটার নম্বর ২৬০৯৬২০০০০৭২। তার জন্ম রেজিস্ট্রেশন নম্বর ০২০০৭১৯৫০০৬০৩৬১৫৪। শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। থুতনির নিচে কাটা দাগ রয়েছে। রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ। ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর সিপি ০১৬৫৬৯৩ এইচএস। পাসপোর্ট নম্বর ওএ ৬০১২৫৬৬। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভাণ্ডারে তার বর্তমান ঠিকানা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত পল্লবী থানাধীন মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।  যার ওয়ার্ড নম্বর ৬। ৪২৩/৯ অফিসার্স কোয়ার্টার।

ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি সূত্র জানায়, জাহিদুল ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে মুরাদ নব্য ধারার জেএমবির সামরিক শাখার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতো। সে গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলায় অংশ নেওয়া নব্য জেএমবি সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিতো।সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি তার কাজ ছিল নব্য ধারার জেএমবি সদস্যদের বাসা ভাড়া করে দেওয়া। এজন্য সে নিজেকে জাহাঙ্গীর হিসেবে পরিচয় দিতো। এমনকি বাড়িওয়ালাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য সে নকল একটি জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করেছিল। নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার তামিমের আস্তানাটি সে নিজে ভাড়া করে দেয়। কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানাটিও ভাড়া করে দেয় সে।

সিটির একজন কর্মকর্তা জানান, জাহিদুল ইসলাম সবসময় মোটরবাইকে চলাফেরা করতো। স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ পরিবারের আদলেই বসবাস করতো। যাতে সহজেই কেউ সন্দেহ করতে না পারে। নারায়ণগঞ্জের অভিযানের দিন বিকেলে সে মিরপুরের ওই বাসা থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেড়িয়ে যায়। এর একদিন পর এক জঙ্গির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাসাটিতে গিয়ে খোঁজ-খবর করে সিটির সদস্যরা। তবে পুলিশ যে তাকে অনুসরণ করছে এই বিষয়টি সে বুঝতে পারেনি। একারণেই শুক্রবার রাতে সে বাসায় এসেছিল।

ওই সূত্র জানায়, নিহত জাহিদুল তার স্ত্রী সন্তানকে রাজধানীর আরেকটি এলাকায় রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে। সেখানে নজরদারির মাধ্যমে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিযান চালাচ্ছে সিটির সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গুলশান হামলার ঘটনায় জঙ্গিরা অবস্থান করছিল, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এমন একটি বাসা শনাক্ত করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। ওই বাসাটিও এই জাহিদুল ভাড়া নিয়েছিলো বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাহিদুলের দুই মেয়েকেই বসুন্ধরার ওই বাসার নিরাপত্তারক্ষীরা দেখেছিলেন। তার স্ত্রী-সন্তানদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে।

সিটি সূত্র জানায়, নিহত জাহিদুলের সঙ্গে জেএমবির নব্য ধারার নেতা ও গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ অন্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সরকারের একটি বিশেষ সংস্থায় চাকরির সুবাদে সে বিশেষ গুরুত্ব পেত।

সূত্র জানায়, বিশেষ ওই সংস্থা থেকে জাহিদুল বেশ কয়েকবছর আগে চাকরীচ্যুত হয়। এরপর থেকেই সে পুরোপুরি জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।


 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত