সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ মে, ২০১৭ ২২:১৫

ঘুষের অভিযোগ ‘সত্য নয়’, ‘এক প্রভাবশালীর কারণে’ জেলে : শ্যামল কান্তি

নিজের বিরুদ্ধে আনা ঘুষ গ্রহণ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন নারায়নগঞ্জের স্কুল শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। ‘এক প্রভাবশালী ব্যক্তির’ কারণে তাকে জেলে যেতে হলো বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে গতবছর ১৩ মে কান ধরে উঠ-বস করানোর ঘটনায় সংবাদ শিরোনামে আসেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। সেই ভিডিওতে তাকে কান ধরে উঠ-বসের নির্দেশ দিতে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে।

ওই ঘটনার দুই মাসের মাথায় তার বিরুদ্ধে এই ঘুষের মামলা করেন একই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক মোর্শেদা বেগম। তার অভিযোগ, চাকরি এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার কথা বলে ২০১৪ সালে তার কছে থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও শ্যামল কান্তি তা করিয়ে দেননি।

ওই মামলায় পুলিশ গত ১৭ এপ্রিল শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিলে নারাণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্ত বুধবার তা আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।

এরপর বিকালে আদালতে আত্মসমর্পণ করে শ্যামল কান্তি জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করে দেন এবং এই শিক্ষককে কারাগারে পাঠানো হয়।

সকালে অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার পর শ্যামল কান্তি আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এখানে ন্যায়বিচার পেলাম না। একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে আমাকে ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।”

ঘুষের অভিযোগ ‘সত্য নয়’ দাবি করে এই শিক্ষক বলেন, “যে সময় ঘুষ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে তখন শীতলকালীন বন্ধ ছিল। আমাকে হয়রানি করার জন্যই এ মামলা করা হয়েছে।”

গত বছরের ১৩ মে শ্যামল কান্তিকে যখন তারই স্কুলে শারীরিক নির্যাতন করা হয়, ওই ঘটনার ভিডিওতে তাকে কান ধরে উঠ-বসের নির্দেশ দিতে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে।

সেই ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচিত হন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের মেজ ছেলে সেলিম। সে সময় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, শিক্ষককে নয়, নাস্তিককে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

পরে হাই কোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্তে দেখা যায়, ইসলাম ধর্ম বা আল্লাহকে নিয়ে শ্যামল কান্তির কটূক্তি করার বিষয়টি সত্য নয়। বরং তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সাংসদ সেলিম ওসমানের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায় ওই তদন্তে।

এ বিষয়ে সাংসদ সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করা হয় আদালতের নির্দেশে। আগামী চার ৪ জুলাই ওই মামলায় ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন রয়েছে।

শ্যামল কান্তি বলেন, হাই কোর্টের নির্দেশে যে মামলা হয়েছে তার বাদী তিনি নন। সেখানে তার করারও কিছু নেই। তারপরও তার ওপর ‘নানাভাবে চাপ’ দেওয়া হচ্ছে। ‘মানসিকভাবে নির্যাতন’ করা হচ্ছে।

শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সারা দেশে প্রতিবাদের মধ্যে তার নিরাপত্তায় পুলিশি পাহারার ব‌্যবস্থা করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার। কিছুদিন নগরীর খানপুর এলাকার বাড়ি থেকে পুলিশের পাহারায় স্কুলে যেতেন তিনি। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে তা প্রত্যাহার করা হয়।

ওই প্রসঙ্গ টেনে শ্যামল বলেন, “পুলিশের নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়েছে। একটা বডিগার্ড দেওয়া হলেও সে ঠিকমত দায়িত্ব পালন করে না।”

পুলিশ আগে থেকেই ‘প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির’ পক্ষে কাজ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “হাই কোর্টের ওই মামলার কারণে আমাকে চাপে রাখার জন্যই এ মামলা (ঘুষের অভিযোগ) করা হয়েছে। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে খুশি করার জন্যই পুলিশ এ ধরনের প্রতিবেদন দাখিল করেছে।”

তার এই অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঘুষের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশিদ বলেন, “পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, কাউকে খুশি করার জন্য নয়। আসামির অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
সূত্র : বিডিনিউজ

আপনার মন্তব্য

আলোচিত