সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ জুলাই, ২০১৭ ০১:৩৯

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন থেকে ৫৭ ধারা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং কোনো নতুন আইনে এ ধারাগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।

বৃহস্পতিবার পরিষদের এক সাধারণ সভা থেকে এ দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত সব হামলার দ্ব্যর্থহীন নিন্দাও জানিয়েছেন সম্পাদকরা। তারা ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’ অফিসে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম, তাসমিমা হোসেন, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসেন, মতিউর রহমান চৌধুরী, শ্যামল দত্ত, ইমদাদুল হক মিলন, নঈম নিজাম, খন্দকার মুনীরুজ্জামান, সাইফুল আলম, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও মতিউর রহমান।

সভায় তিনটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এ আইনের খসড়ার ১৯ ধারায় বিদ্যমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সব বিষয় বিদ্যমান থাকায় আমরা উদ্বিগ্ন। এই ১৯ ধারাতেও তথাকথিত মানহানি, সামাজিকভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা বিশেষভাবে রাখা হয়েছে।

যদিও আইনমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ৫৭ ধারাটি থাকছে না। কিন্তু প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৯ ধারাতে আরও শক্তভাবে তা রাখা হয়েছে। আমরা এটা ভেবেও উদ্বিগ্ন যে, প্রস্তাবিত খসড়ার ১৫(৫) ধারা চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আরেকটি বড় বাধা হবে। কারণ এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কোনো বক্তব্য সরকারি ভাষ্যের বিপরীত হলে তা ‘ডিজিটাল সন্ত্রাসী অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক বিধান পর্যালোচনা ও সংশোধন করে দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনার সুযোগ করে দিতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রস্তাবে বলা হয়, সম্পাদক পরিষদ অনলাইন গণমাধ্যম বিষয়ক নীতিমালার খসড়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এতেও ৫৭ ধারাসহ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ খসড়া নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। কারণ এতেও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কথিত মানহানিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

সম্পাদক পরিষদ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায় হয়, এমন সব বিধিবিধান বাদ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কথিত মানহানির অভিযোগকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে নেয়ার বিধানও বাদ দেয়ার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি। আমরা এ ধরনের বিষয়ের প্রতিবিধানের জন্য সবার আগে প্রেস কাউন্সিলে যাওয়া বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানাচ্ছি। দেওয়ানি অভিযোগের ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ দাবির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।

সম্পাদকরা বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সরকারের কোনো নীতিমালা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম- তাদের সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল মিডিয়া তথা ওয়েবসাইট, অনলাইন সামাজিক মাধ্যমে কোনো রকম হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রতি আমাদের আহ্বান, তারা যেন প্রচলিত গণমাধ্যমের নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, সম্পাদক পরিষদ সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত সব হামলার দ্ব্যর্থহীন নিন্দা করে এ ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য সারা দেশে যত মিথ্যা মামলা করেছেন, তা প্রত্যাহারের দাবি করছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় যত মামলা আছে, তা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি করছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত