নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ জুলাই, ২০১৭ ১৯:০৯

চাকরি ছাড়ার কথা ভেবেছিলাম, এখন সবার সমর্থনে অভিভূত: ইউএনও তারিক

পঞ্চম শ্রেণির শিশু-শিক্ষার্থীর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে কার্ড ছাপিয়ে মামলায় পড়া ইউএনও তারিক সালমন তাকে সমর্থনে মানুষের ভালোবাসায় অভিভূত।
 
সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, 'আমি আসলে বাকরুদ্ধ। আমি আশা করিনি এত প্রতিক্রিয়া হবে।  মানে এটা আমার অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। আমি দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের পজেটিভ প্রতিক্রিয়ার কারণে আমি আনন্দিত।'

জামিনযোগ্য মামলা হলেও সেদিন তাকে কারাগারে পাঠানোয় বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। দুঘন্টার কারাবাসে চাকরি ছাড়ার কথাও ভেবেছিলেন।

 "যখন আমাকে কারাগারে পাঠানো হলো তখন মনে হয়েছে যে এই চাকরিটা মনে হয় আমার আর প্রয়োজন নেই। তখন আসলে খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। স্ত্রীকে খবর দিয়েছিলাম যে কারাগারে বসে বইপত্র পড়ব। কিন্তু পরে দেশবাসীর যে সাপোর্ট পেলাম। সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সাপোর্ট পেলাম তাতে আমি অনুপ্রাণিত, কৃতজ্ঞ।"

অভিযোগ বঙ্গবন্ধুর বিকৃত ছবি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু শিশুর কাঁচা হাতে আঁকা ছবিকে অভিযোগকারী ছাড়া কেউই বিকৃত বলছেন না। বরং এই সুন্দর কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন তারিক। তাতে পাশে পেয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও।

"আমাকে হেনস্থা করা হলো। আমি এ ব্যাপারে কোন নালিশ করিনি। আমাদের প্রশাসন ক্যাডারের অ্যাসোসিয়েশনের যারা নেতা রয়েছেন, আমার সিনিয়র স্যাররা, জুনিয়র কলিগরা তারা সবাই এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায়। বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও যায়।"

জানা গেছে তাকে এভাবে হাজতবাস করানোয় বিস্মিত হয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। প্রধানমন্ত্রীর পিএস ফোন করে তাঁর খোজ খবর নেয়ার কথা জানালেন তিনি নিজেই।

"আমার সাথে গতকাল ও আজ অনেকের ফোনে কথা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আমার খোঁজ নিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পিএস স্যার তিনি আমার সাথে কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র সচিব স্যার আমার খোঁজ খবর নিয়েছেন।  আমাদের অ্যাসিশিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কবির বিন আনোয়ার স্যার তিনি তো অনেকবারই খবর নিচ্ছেন। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার স্যারও খবর নিয়েছেন। তারা ব্যাপারটা মনিটরিং করছেন।"

বুধবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে আগৈলঝাড়ার সাবেক ও বর্তমানে বরগুনা সদরের ইউএনও গাজী মো. সালমন তারিককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন জেলার মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম মো. আলী হোসাইন। প্রায় তিন ঘণ্টা জেলে থাকার পর দুপুর ২টায় আবার তাকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন একই বিচারক।

স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রের পেছনের পাতায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপানোয় জাতির পিতার মানহানি হয়েছে অভিযোগে গত ৭ জুন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়েদুল্লাহ সাজু বাদী হয়ে আগৈলঝাড়ার ইউএনও গাজী তারেক সালমনের বিরুদ্ধে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ওইদিন মামলা আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজী তারিক সালমনকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারির আদেশ দেন।  

এ মামলা দায়েরের পর সমালোচনার মুখে এক মাস আগে আগৈলঝাড়ার ইউএনও গাজী তারিক সালমনকে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদে বদলি করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত