সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ জুলাই, ২০১৭ ১৪:৪২

দেশের কোথাও বন্যা হয়নি, নদী ভাঙন মেনে নিতে হবে: মন্ত্রী

দেশের কোথাও বন্যা হয়নি বলে দাবি করেছেন পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে পানি বেড়েছে তা মূলত বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার পানি। এবার যেটা হয়েছে তা মূলত বৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির ফল।’

ইতোমধ্যে অন্য বছরের তুলনায় ২/৩ গুণ বৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী।

বুধবার কৃষি ও পানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, “বেশিরভাগ নদীর পানি বিপদসীমার নিচে আছে। জলাবদ্ধতা আর বন্যার পার্থক্য কিন্তু আপনাদের বুঝতে হবে। সাধারণত বড় বন্যা হয় যখন যমুনার পানি, পদ্মার পানি এবং মেঘনার পানি এক সাথে বাড়ে। সাথে যদি সাগরে তখন অমাবস্যা থাকে, তখন বন্যার প্রকোপ হয়।

“এবার ইতোমধ্যে দ্বিগুণ বৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য আমরা একটা ওয়ার্নিং দিয়ে রাখছি যে (বড় বন্যার) একটা সম্ভাবনা আছে। আর এই বন্যাটা হয় অগাস্টের তৃতীয় সপ্তাহে। সেটার জন্য একটা প্রস্তুতি নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিশেষভাবে বলা হয়েছে।”

জেলা প্রশাসকরা বন্যা নিয়ে কোনো সমস্যার কথা বলেননি, তবে নদী ভাঙনের প্রসঙ্গ তুলেছেন বলে জানান পানি সম্পদ মন্ত্রী।

তিনি বলেন, নদী ভাঙন আমাদের দেশে বাস্তবতা, তা মেনে নিতে হবে।

ডিসিদের কী নির্দেশনা দিয়েছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিসিরা বন্যার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। তারা নদী ভাঙন রোধ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা তাদের বলেছি, এখন থেকে মন্ত্রণালয়ের যে বরাদ্দ থাকে তার অর্ধেক ব্যয় করব নদী শাসন কাজে। এ কাজ করতে ডিসিদের কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া পানি নেমে গেলে বাঁধ সংরক্ষণ করতে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছি।’

“ভারতে কিন্তু বন্যা হয়েছে, বন্যায় লোকও মারা গেছে, বাংলাদেশে কিন্তু সে রকম ঘটনা ঘটেনি। ভাঙনের যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো আমরা দেখছি। ভাঙন প্রতিরোধ করা খুব ব্যয়সাধ্য বিষয়। যে রিসোর্স আছে সেই রিসোর্সের মধ্যে করার চেষ্টা করছি। আমরা বিভিন্ন জায়গায় প্রকল্প নিয়েছি। এর সঙ্গে খনন ও ড্রেজিং যোগ করেছি।”

আগামীতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেটের অর্ধেক অর্থ ড্রেজিংয়ের জন্য ব্যয় করা হবে বলেও জানান পানিসম্পদ মন্ত্রী।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের একঘণ্টার বৈঠক দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে শেষ হয়েছে। সচিবালয়ে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) তিন দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হয় মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনের পর থেকে মন্ত্রিপরিষদের সম্মেলন কক্ষে কর্ম-অধিবেশন শুরু হয়। সম্মেলনে ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অংশ নিচ্ছে। মোট ২২টি কর্ম-অধিবেশন হবে। সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বিভিন্ন কর্ম-অধিবেশন চলছে। বুধবার এর দ্বিতীয় দিন। মাঠ পর্যায়ে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যা ও চাহিদার কথা তুলে ধরেন জেলা প্রশাসকরা।

এরআগে গত ১৮ জুলাই ভোলার ইলিশা-রাজাপুর রক্ষা প্রকল্প পরিদর্শনকালে উত্তরাঞ্চলের বন্যার প্রচার নিয়ে মিডিয়াকে দোষারোপ করেছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘এ বছর মিডিয়া যেভাবে বন্যা বলছে সেভাবে উত্তরাঞ্চলে বন্যা হয়নি।’

ওই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা উত্তরবঙ্গে আমার সাথে চলেন, আমি দেখাবো বাঁধের মধ্যে কোনও বন্যার পানি নেই। টেলিভিশন ও পত্রিকায় যে ছবিগুলো দেখি সেগুলো হচ্ছে বাঁধের বাইরের ও চরাঞ্চলের ছবি। আর ওই জায়গাগুলো আমরা রেখেছি বন্যার পানি ধারণের জন্য। কারণ নদীর পানি যখন বৃদ্ধি পায় তখন পানি একদিকে যেতে হবে। যেতে যদি না দেই তাহলে মাটি নরম হয়ে ভেঙে যাবে। এসব জায়গায় বসতি থাকার কথা না। কিন্তু আমাদের দেশে জনসংখ্যা এত বেশি তাই মানুষ সেখানে গিয়ে ঘরবাড়ি করে থাকে। আর ওই ছবিগুলোই আমরা মিডিয়াতে দেখি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত