সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০২:১৩

নারীদের ফসলের মাঠে যেতে মানা, ইমাম আটক

নারীরা মাঠে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হচ্ছে, এমন অজুহাত তুলে মসজিদে মাইকিং করে তাদের মাঠে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এ ঘটনা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর)বিকালে মসজিদের ইমাম আবু মুছাকে আটক করেছে পুলিশ।

গত ৮ ডিসেম্বর (শুক্রবার) জুম্মার নামাজের পর কল্যাণপুর জামে মসজিদে এক বৈঠকে নারীদের মাঠে যাওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাতে ওই সিদ্ধান্ত মসজিদের মাইকে ঘোষণাও করা হয়।

কল্যাণপুর গ্রামের জাহেদা খাতুন জানান, বাড়ির কাছে মাঠ হওয়ায় তারা গবাদি পশুর জন্য ঘাস কাটতেন। নিষেধ করায় তাদের ঘাস কাটা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পশু পালনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কল্যাণপুর জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘জুম্মার নামাজের পরপরই আমি সেখান থেকে চলে যাই। পরে বিষয়টি শুনেছি। তবে এটি মসজিদ বা মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্ত না। এটি গ্রামের মানুষের সিদ্ধান্ত। তাদের দাবি, নারীরা মাঠে গেলে ফসলের ক্ষতি হয়। সে জন্য মাঠে পাহারাদার রাখার সিদ্ধান্ত হয় এবং এই সিদ্ধান্তটি মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়।’

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, ‘গ্রামের বেশির ভাগ লোকের দাবি, নারীরা মাঠে যাওয়ায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। তাই তাদের মাঠে যেতে নিষেধ করে, মাঠ চৌকিদার নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

আটক ইমাম আবু মুছা মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বলেন, ‘গত জুম্মায় বলেছিলাম, মাঠে ফসলের যে ক্ষতি হচ্ছে- তার কারণ সেখানে আমাদের মা-বোনেরা যায়। সেখানে গিয়ে গাছের কলা, মোচা ও পাতা কাটে এবং ফসল নষ্ট করে। এজন্য তাদের যদি বোঝাতে পারি, তা হলে সবাই উপকৃত হবো।’

‘কোনও নারী মাঠে যেতে পারবে না’-এই সিদ্ধান্তটি মাইকে ঘোষণা দেন রুহুল আমিন শেখ। তিনি বলেন,‘গত শুক্রবার মসজিদে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়- কোনও নারী মাঠে যেতে পারবে না। এ বিষয়ে আমাকে মাইকে ঘোষণা দিতে বলা হয়েছিল।’

মসজিদে বৈঠকে অংশ নেওয়া স্থানীয় কৃষক আফতাব আলী শেখ, আব্দুল আল মামুন, মইনুদ্দিন এবং হিয়াউর অভিযোগ করে বলেন, ‘কল্যাণপুরে কলার চাষ বেশি হয়। এছাড়া, অন্যান্য রবি ফসল তো রয়েছেই। এই এলাকার কিছু নারী মাঠে গিয়ে এসব ফসল কেটে নিয়ে যায়। এ কারণে নারীদের মাঠে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে কুমারখালী মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা নীলা বলেন, ‘সেদিন রাতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে নারীদের মাঠে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এটি জঘন্য কথা। নারীদের ঘরের মধ্যে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সেই সঙ্গে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।’

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএও) মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘সোমবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আমাদের এক সদস্য জানান যে, শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের একটি মসজিদের পেশ ইমাম নারীদের ফসলের মাঠে যেতে নিষেধ করেছেন। ওই ঘটনার কারণে মঙ্গলবার বিকালে ওই পেশ ইমামকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেকের কার্যালয়ে গেলে তিনি কোনও কথা বলতে রাজি হননি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত