অনলাইন ডেস্ক

১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১১:৫৭

মন্ত্রী ছায়েদুল এক পাঞ্জাবিতে ১৭ বছর!

সদ্যপ্রয়াত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এডভোকেট ছায়েদুল হকের সাদাসিধে জীবনযাপনে এক পাঞ্জাবি পরে ১৭ বছর কাটিয়েছিলেন বলে জানাচ্ছেন তাঁর এলাকার এক সহযোগী। এলাকায় গেলে ১৪ সেলাইয়ে শীর্ণ এক শাল ব্যবহার করছিলেন তিনি দুই যুগের মত সময় ধরে। তাঁকে সৎ ও নির্লোভ রাজনীতিবিদ হিসেবে বলছেন এলাকার মানুষ।

ছায়েদুল হকের এমন সাদাসিধে জীবন নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এনটিভিঅনলাইন। প্রতিবেদনে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বলা হয়, বাবার নির্মিত দোচালা টিনের ঘরটি ছিল তাঁর ভরসা। সে ঘরটিও জীর্ণশীর্ণ। কোথাও কোথাও ভেঙে পড়েছে। বাড়িতে রাতযাপনের সময় বাবার নির্মিত বৈঠকখানায় রাত যাপন করতেন। এখানেও তিনি দুটি টেবিল জোড়া দিয়ে চৌকি বানিয়ে ঘুমাতেন। বিলাসী জীবন তাঁর পছন্দ ছিল না। তবে তিনি সব সময় পরিপাটি থাকতেন। চোখে সুরমা ব্যবহার করতেন। সহকর্মী রাজনৈতিককর্মীদের দীক্ষা দিতেন ‘কখনো অর্থের কোনো অপচয় করো না। সব কিছুর হিসাব দিতে হবে।’

প্রয়াত মন্ত্রীর ৫১ বছরের সহযোগী ভানেশ্বর দেবনাথ বলেন, ‘উনি ছাত্রজীবনের পর যখন আইন পেশায় ভর্তি হন, তখন ১৭ বছর একাধারে একটি পাঞ্জাবি পরেছেন। নিজ হাতে সেলাই করে পাঞ্জাবি পরতেন।’

একই গ্রামের আবদু মিয়া বলেন, তিনি ২০ বছর ধরে একটি শাল পরেছেন। ১৪টি সেলাই দিয়ে তা ব্যবহার করতেন। ১০০-২০০ টাকা দামের লুঙ্গি পরে খুবই সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন।

করিম মিয়া নামের একজন বলেন, মন্ত্রী ছায়েদুল হক বাড়িতে এলে দুটি টেবিল জোড়াতালি দিয়ে ঘুমাতেন।

স্থানীয়রা জানায়, জরুরি অবস্থা জারির পর সারা দেশে দুর্নীতিবাজদের ধরতে সেনা পরিচালিত অভিযানের সময় তাঁর বাড়িতে গিয়ে জীর্ণ অবস্থা থেকে সেনাসদস্যরা অবাক যান।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি নেওয়ার পর এলএলবি পাস করে আইন পেশায় নিজেকে যুক্ত করেছিলেন ছায়েদুল হক। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করে ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। ২০১৪ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী হওয়ার পর মিন্টো রোডের সরকারি বাসায় ওঠেন তিনি। ছায়েদুল হকের একমাত্র ছেলে এ এস এম রায়হানুল ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রভাষক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে ছায়েদুল হক প্রথম নির্বাচিত হন ১৯৭৩ সালে। এরপর ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে হেরে যান। ১৯৯৬ সালে আবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন ছায়েদুল হক। ৭৫ বছর বয়সী ছায়েদুল হক গত শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে মারা যান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত