সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ২২:১৯

কমল হার্টের ভাল্ব ও পেসমেকারের দাম

দেশে প্রথমবারের মতো হার্টের ভাল্ব এবং পেসমেকারের সর্বোচ্চ খুচরামূল্য (এমআরপি) নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ওপর ভিত্তি করে এই মূল্য নির্ধারণ করেছে।

মূল্য নির্ধারণে হার্টের ভাল্বের ক্ষেত্রে মডেল ও কোম্পানিভেদে ৪ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম কমানো হয়েছে। পেসমেকারের ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা থেকে ৪ লাখ ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম কামানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় হার্টের ভাল্ব ও পেসমেকারের এমআরপি নির্ধারণের বিষয়টি জানান প্রশাসনের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে এসব মূল্য নির্ধারণ করেছি। মানুষ যেন হাসপাতালে এসবের দামের বিষয়ে প্রতারিত না হন সে কারণে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করি সবাই এই নিয়ম মেনে চলবেন। কোথাও কোনো অনিয়ম হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

তিনি বলেন, ইতোপূর্বে হার্টের রিংয়ের (স্টান্ট) মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ অন্য হাসপাতালগুলোতেও নির্ধারিত মূল্যে রিং ব্যবহার করছেন রোগীরা। একইভাবে আজ ভাল্ব ও পেসমেকারের মূল্য নির্ধারণ হলো। এখন থেকে দেশের সব হাসপাতালে এই মূল্যেই এসব ডিভাইস পাবেন রোগীরা।

জানা গেছে, হার্টের ভাল্ব ও পেসমেকারের মূল্য নির্ধারিত না থাকায় রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো টাকা আদায় করা হতো। বিষয়টি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নজরে এলে গত ২৮ নভেম্বর কার্ডিওলজিস্ট, কার্ডিয়াক সার্জন এবং মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে পেসমেকার ও ভাল্বের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যা আজ প্রকাশ করা হলো।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এসজেএম মেকানিক্যাল হার্ট ভাল্ব (রোটেটেবল এ্যরোটিক এবং রোটেটেবল মিট্রাল) হাসপাতাল ভেদে বিক্রি হতো ৫৮ হাজার টাকা থেকে ৭৪ হাজার টাকায়। বর্তমানে এর মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ৫৮ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে দাম কমানো হয়ে ১৬ হাজার টাকা।

একইভাবে রিজেন্ট মেকানিক্যাল হার্ট ভাল্বের দাম নির্ধারণ হয়েছে ৫৮ হাজার টাকা, মেডিট্রনিক ওপেন পাইভোট হার্ট ভাল্ব (মিট্রাল), মেডিট্রনিক ওপেন পাইবোট হার্ট ভাল্ব (এ্যরোটিক) ইতোপূর্বে ৫৮ থেকে ৭৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো। বর্তমানে এসব ভাল্বে দাম ৫৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসজেএম মেকানিক্যাল হার্ট ভাল্ব (কনডুইফ ভাল্ব) বিক্রি হতো দেড় লাখ থেকে এক লাখ ৭৬ হাজার টাকা। বর্তমানে এর মূল্য নির্ধারণ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এক্ষেত্রে দাম কমানো হয়েছে ২৬ হাজার টাকা।

ওন-এক্স প্রস্থেটিক হার্ট ভাল্ব (এ্যরটিক) বিক্রি হতো ৫৫ থেকে ৫৯ হাজার ৮০০ টাকায়। এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। এছাড়া এসজেএম টিস্যু হার্ট ভাল্ব (এ্যরটিক) বিক্রি হতো আড়াই লাখ টাকায়। এটির মূল্যের কোন পরিবর্তন করা হয়নি।

এদিকে ভিভিআই সিঙ্গেল চেম্বার পেসমেকার হাসপাতাল ভেদে বিক্রি হতো ৬৫ হাজার টাকা থেকে ৭৫ হাজার টাকায়। এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা।

ভিভিআই (সিঙ্গেল চেম্বার ইউথ রাইট রিসপন্সিভ) পেসমেকার বিক্রি হতো এক লাখ টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে নির্ধারিত দাম ৯৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা। ভিভিআইআর (সিঙ্গেল চেম্বার ইউথ রাইট রিসপন্সিভ) পেসমেকার উইথ এমআরআই বিক্রি হতো ২ লাখ ১০ হাজার থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকায়। এর দাম নির্ধারণ হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

ডিডিআর (ডুয়েল চেম্বার) ইউথ রাইট রিসপন্সিভ পেসমেকার বিক্রি হতো একলাখ ৬৫ হাজার থেকে দুই লাখ টাকায়। এখন থেকে বিক্রি হবে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকায়। ডিডিআর (ডুয়েল চেম্বার) উইথ এমআরআই’র পূর্ব মূল্য ছিল তিন লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। বর্তমানে নির্ধারিত মূল্য ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

সিআরটি-পি বিক্রি হতো ৪ লাখ থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বর্তমান মূল্য ৪ লাখ থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আইসিডি-ভিআর (সিঙ্গেল চেম্বার) পেসমেকারে পূর্ব মূল্য ছিল সাড়ে ৪ লাখ টাকা থেকে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, বর্তমানে নির্ধারিত মূল্য ৪ লাখ ২০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা।

আইসিডি-ভিআর (ডুয়েল চেম্বার) পেসমেকার বিক্রি হতো ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ৯ লাখ টাকা। খুচরা মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ৯ লাখ টাকা।

এছাড়া সিআরটি-ডি পেসমেকার এর আগে বিক্রি হতো ৯ লাখ টাকা থেকে ১৪ লাখ ৭ হাজার টাকায়, বর্তমানে এর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা।
 
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) অধ্যাপক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মূল্য নির্ধারণ হয়েছে এটা ভাল কথা। কিন্তু হার্টে ভাল্ব ও পেসমেকার বসাতে রোগীকে আরও আনুষঙ্গিক ব্যয় বহন করতে হয়। এক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন যদি ভাল্ব ও পেসমেকারের পাশাপাশি প্রতিস্থাপনের সর্বোচ্চ প্যাকেজমূল্য নির্ধারণ করে দিত তাহলে ভালো হতো।

তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্যাকেজ মূল্য নির্ধারণ করা প্রশাসনের কাজ নয়। এটি হাসপাতালের কাজ।

এ সময় আরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান, প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাফি আল মজুমদার, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. রুহুল আমিন, নায়ার সুলতানা প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত