সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ এপ্রিল, ২০১৮ ১৯:২৪

রাজীব শঙ্কামুক্ত নয়, মস্তিষ্কের সামনে-পেছনেও আঘাত

রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় বাসের চাপায় হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের (২১) অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। মাথার সামনে ও পেছনের খুলিতেও আঘাত লেগেছে তার।

শুক্রবার (০৬ এপ্রিল) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শামসুজ্জামান তথ্য জানান।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় রাজীব হাত হারিয়েছেন। তার মাথায়ও আঘাত লেগেছে। তাই তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। আঘাতের কারণে তার ব্রেনে সামান্য রক্তক্ষরণের পাশাপাশি পানিও জমেছে। তবে এখন ব্রেনের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নেই।

ডা. শামসুজ্জামান আরো বলেন, রাজীবকে হাই-কেয়ারের জন্য আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার অপারেশনের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আপাতত আমরা সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে যাচ্ছি না।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে ঢামেক আইসিইউর ৩০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রাজীবকে দেখতে যান জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য এ এস এম ফিরোজ (এমপি)।

সাক্ষাৎ শেষে চিফ হুইপ সাংবাদিকদের বলেন, রাজীবের চিকিৎসায় সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ও সরকার। তার এই করুণ অবস্থার জন্য যারা দায়ী, সেই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

রাজীবের খালা জাহানারা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, রাজীব কথা বলতে পারছে না। ডাক দিলে শুধু তাকিয়ে দেখছে শুধু। এতদিন আমরা জানতাম ওর শুধু হাতই গেছে। এখন শুনছি তার মাথায়ও অনেক আঘাত লেগেছে। ছেলেটা কিছু মুখেও দিচ্ছে না। কি করবো, কিছু বুঝতে পারছি না।

রাজীবের মামা জাহিদুল ইসলাম জানান, রাজীবের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ওর মাথায়ও অনেক আঘাত লেগেছে, যে কারণে ও মাঝে মধ্যেই খুব কষ্ট পাচ্ছে। সরকারের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, রাজীবকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হোক।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাজীবকে লাইফ সাপোর্টে রাখার কথা ছিল। কিন্তু তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তা আর দেয়া হয়নি। শুক্রবার সকাল থেকে মনে হচ্ছে তার অবস্থার আবার কিছুটা অবনতি হয়েছে। মাঝে মধ্যে আমাদের চিনতে পারছে না।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন। বাসটি হোটেল সোনারগাঁওয়ের বিপরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ করে পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস ওভারটেক করে।

সেসময় বিআরটিসির দোতলা বাসটির পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা রাজীবের ডান হাতটি বাইরের দিকে সামান্য বেরিয়ে ছিল। স্বজন পরিবহনের বাসটি বিআরটিসি বাসের গা ঘেঁষে পেরিয়ে যাওয়ার সময় রাজীবের হাতটি কাটা পড়ে। তাকে দ্রুত পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও বিচ্ছিন্ন হাতটি রাজীবের শরীরে আর জোড়া লাগাতে পারেননি। পরে তাকে বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

ঢাকায় রাজীব হোসেন যাত্রাবাড়ীর মীর হাজিরবাগের একটি মেসে থাকতেন। কষ্টে পড়াশোনা চালাচ্ছিলেন স্বজনদের সহযোগিতায়। রাজীবের মা-বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। বাবা হেলালউদ্দীন। তিন ভাইয়ের মধ্যে রাজীব সবার বড়। বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের দাসপাড়ায়। রাজীব টিউশনি করতেন এবং চাচা, খালাসহ সবার সহযোগিতায় পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত