সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১২:০৯

বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্প

জাপানের নিকে এশিয়ান রিভিউর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ পরিচিত ছিল দুর্যোগ-দুর্বিপাকের দেশ হিসেবে। এখানে ব্যাপক দারিদ্র্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল। আর এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শরণার্থী সংকট মোকাবেলা করছে দেশটি। প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশটিতে ঢল নেমেছে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের।

তবে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্প। যদিও এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের খুব কমই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দ্রুত বর্ধনশীল শিল্প খাতের সহায়তায় বাংলাদেশে এক দশকের বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশের বেশি। গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭.৮৬ শতাংশে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প চীনের পরই বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

বুধবার জাপানের ঐতিহ্যবাহী নিকে এশিয়ান রিভিউর প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

'বাংলাদেশের উত্থান এবং উত্থান' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৭৪ সালে ব্যাপক অনাহারে থাকা দেশটি এখন ১৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০০৯ সাল থেকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে এবার দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৫০ ডলারে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, এ সময় চরম দারিদ্র্যের হার ১৯ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। চলতি বছরই আরেকটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ বলছে, ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে।

অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অর্জন সরকারের লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির রফতানি বাড়ছে গড়ে ১৫ শতাংশ হারে। গত অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে তিন হাজার ৬৭০ কোটি ডলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রফতানি যেন পাঁচ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া দিচ্ছেন ২৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি। বছরে রেমিট্যান্স আয় ১৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। চলতি বছর রেমিট্যান্স আসবে এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার। সরকার এখন ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এরই মধ্যে ১১টির কাজ শেষ হয়েছে, নির্মাণাধীন আছে ৭৯টি।

তবে চিত্তাকর্ষক এসব পরিসংখ্যানের আড়ালে লুকিয়ে আছে কঠিন বাধা— অবকাঠামো সমস্যা থেকে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে তা আরও তীব্র হয়েছে।

হংকংভিত্তিক ব্রোকারেজ সিএলএসএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টোফার উড বলেন, বড় ধরনের কোনো ঝামেলা ছাড়াই নির্বাচনটা শেষ হয়ে গেলে এবং এরপর স্থিতিশীল অবস্থা বজায় থাকলে বাংলাদেশ হবে একটি দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের গল্প। অবশ্য ঢাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও প্রধান নির্বাহীরা বলছেন, রাজনৈতিক সংকটে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে না।

তবে দেশটিতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। শেখ হাসিনার নয় বছরের শাসনকাল তুলনা করলে দেখা যায়, ২০০৮ সালে এফডিআই ছিল ৯৬ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে তা ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ জরিপে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কারণ সরকারি কর্মকর্তারা। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। মাত্রাতিরিক্ত লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, দুর্বল অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ১৯০টি দেশের মধ্যে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত